হাজী শরীয়তুল্লাহর পরিচয় দাও।

 

 

হাজী শরীয়তুল্লাহর পরিচয় দাও।

ভূমিকা: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে মুসলমানদের মধ্যে কয়েকটি সংস্কার আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এসব আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি দূর করে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত আদর্শে মুসলিম সমাজকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। এর ধারাবাহিকতায় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে হাজী শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বঙ্গদেশেই সর্বপ্রথম বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। এ আন্দোলনের মূল শক্তি যুগিয়েছিল বাংলার নিম্নশ্রেণীর লোকেরা। হাজী শরীয়তুল্লাহর এ আন্দোলনই ইতিহাসে ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত।

 

হাজী শরীয়তুল্লাহর পরিচয়: বাঙালি মুসলিম মনীষী হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার সামাইল নামক গ্রামে ১৭৮১ সালে তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি মক্কায় হজে যান। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ওয়াহাবি আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন এবং সংস্কারের চেতনা লাভ করেন। ১৮২০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তার ফরায়েজি মতবাদ প্রচার শুরু করেন। তার ফরায়েজি আন্দোলন গোটা ফরিদপুর, পাবনা, ঢাকা, রংপুর, নোয়াখালী, সিলেট ও যশোর অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করে।

 

কুসংস্কার দূরীকরণ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধাচরণ, মুসলমানদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বাংলায় পুনর্জাগরণের সূত্রপাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ও সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং তার আন্দোলন পরিচালিত করেন দক্ষতার সাথে। ১৮৩১ সালে তার উপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৮৪০ সালে তার মৃত্যু হয়।

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পর বলা যায়, তিনি ছিলেন একাধারে ধর্মীয় সংস্কারক, শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, কৃষকের অধিকার সচেতন এবং ব্রিটিশ সরকার বিরোধী। টেলরের ধারণা মতে, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এর এক-ষষ্ঠাংশ মুসলমান এবং ঢাকা শহরের এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বাংলায় মুসলিম জাগরণে তার অবদান অপরিহার্য। তিনি বাংলায় অন্যতম একজন সমাজ সংস্কারক।