দুদু নিয়ার পরিচয় দাও।

দুদু নিয়ার পরিচয় দাও।

ভূমিকা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে এদেশে যে হিন্দু জমিদার শ্রেণী গড়ে উঠেছিল তারা মুসলমান কৃষকদের নিকট হতে দুর্গাপূজা, কালীপূজা ও নানারকম হিন্দু উৎসবের জন্য কর ধার্য করত। দুদু মিয়া এ সকল জমিদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা এবং নির্যাতিত কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে হিন্দু জমিদার এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অনির্বাণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, সত্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তিনি বাংলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে চিরস্মরণীয়। নিম্নে দুদু মিয়ার পরিচয় বর্ণনা করা হলো।

 

 

 

দুদু মিয়ার পরিচিতি: ১৮১৯ সালে দুদু মিয়া মাদারীপুর মহকুমার মূলফতগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি তার পিতার কাছে আরবি ও ফার্সি ভাষা শিক্ষালাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য ১২ বছর বয়সে তাকে মক্কায় প্রেরণ করা হয়। পাঁচ বছর মক্কায় অবস্থানের পর দুদু মিয়া স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। স্বদেশে ফিরে তিনি ফরায়েজি আন্দোলনের হাল ধরেন।

তার পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহ যে ফরায়েজি আন্দোলন সূচনা করেছিল দুদু মিয়া সে আন্দোলনকে আরো বেশি বেগবান করে তোলেন। দুদু মিয়ার আসল নাম মুহাম্মদ মহসিন উদ্দিন আহমদ ওরফে দুদু পিতার মৃত্যুর পর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। মিয়া। ১৮৪০ সালে তার তিনি ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশ সরকারের দমন ও শোষণের হাত থেকে মুসলমান কৃষকদের রক্ষার জন্য শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। এছাড়া তিনি কানাইপুরের জমিদার, ফরিদপুরের জমিদার, নীলকর বিরোধী আন্দোলন ও খাজনা আদায় অবৈধ ঘোষণা, মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ। জাগ্রতকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাহসিকতার সাথে অবতীর্ণ হন এবং সফল হন।

 

তিনি বলেন, “এ পৃথিবী আল্লাহর। সুতরাং জমির উপর সকলের অধিকার রয়েছে।” তাই তিনি জমির খাজনা আদায় অবৈধ ঘোষণা করেন।

জেমস ওয়াইজ বর্ণনা করেছেন যে, ১৮৪৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এক বিরাট সশস্ত্র বাহিনী পাঁচ চরের কুঠি আক্রমণ ও ধূলিসাৎ করে। তারা পার্শ্ববর্তী গ্রাম লুন্ঠন করে এবং ব্রাহ্মণ গোমস্তকে বন্দি করে আনে: পরে বাখেরগঞ্জ জেলায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে নীলকর ও জমিদাররা দুদু মিয়া ও তার দলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। জেলা কোর্টের রায়ে দুদু মিয়া ও তার ৬৬ সঙ্গী দোষী সাব্যস্ত হয়। পরে তিনি সদর নিয়ামত আদালতে আপিল করে খালাস পান। এরপর থেকে নীলকর ও জমিদাররা তাকে সমীহ করে চলতেন।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, দুদু মিয়া ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহর চেয়ে অধিক বিদ্রোহী। তিনি বেশি আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করতেন। তিনি যদিও তার পিতার ন্যায় পণ্ডিত ছিলেন না তথাপিও তিনি যে ভূমিকা পালন করেন তা অদ্বিতীয় ছিল। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি তার পিতাকেও ছাড়িয়ে যান। ১৮৬০ সালে তিনি ঢাকায় ১৩৭ নং বংশাল রোডে বসতি স্থাপন করেন এবং ১৮৬২ সালে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।