ফরায়েজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল।
ভূমিকা: ফরায়েজি আন্দোলন ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুসলিম সমাজের দুরবস্থাকে লক্ষ্য করে তিনি যে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে ধর্মীয় সংস্কারই ছিল প্রধান। কেননা সে সময়ে ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার দূর করে ইসলাম ধর্মকে মুক্ত করাই ছিল জরুরি। পরবর্তী সময়ে তাঁর ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় সমাজের আরো নানা দিক। ফলে ফরায়েজি আন্দোলনের প্রকৃতি ধর্মীয় সংস্কার থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে পরিণত হয়। অবশ্য ফরায়েজি আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত হওয়ায় অনেকে এ আন্দোলনকে কৃষক আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করে থাকে।
ফরায়েজি আন্দোলনের উদ্দেশ্য:
১. মুসলিম সমাজকে ইসলামের মূলনীতি তথ্য ফরজের উপর প্রতিষ্ঠিত করা।
২. মুসলমানদের ধর্মভীরু এবং নৈতিক বলে বলীয়ান করে গড়ে তোলা।
৩. কর্তব্য পালনে সচেতন এবং অধিকার আদায়ে মুসলমানদের দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলা।
৪.মুসলমান জাতিকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং মুসলমান জাতির হারানো ঐতিহ্যকে
৫.পুনরুদ্ধার। মুসলিম সমাজে ইসলাম বিরোধী যেসব কার্যকলাপ প্রচলিত ছিল তা রোধে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।
৬. ব্রিটিশ সরকারের শাসন, শোষণ এবং তাদের সৃষ্ট জমিদারদের অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।
ফরায়েজি আন্দোলনের আদর্শ: হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য যেহেতু বর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ছিল, তাই এ আন্দোলনের আদর্শও ছিল কিছুটা ধর্মভিত্তিক। নিম্নে এ আন্দোলনের আদর্শ উল্লেখ করা হলো।
ক. আবশ্যক পালনীয় কর্তব্য: ফরায়েজি আন্দোলনের মূলভিত্তি ছিল ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূলন্তপ্ত অর্থাৎ ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ এ পাঁচটি ফরজ কাজকে প্রতিষ্ঠা করতেই ফরায়েজি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল। অন্যদিকে, মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অনৈসলামিক কার্যকলাপ যেমন- পীর পূজা, কবর পূজা প্রভৃতিকে ফরায়েজিয়া অস্বীকার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
৭. শাসায়ান্ত্রিক আদর্শ: হাসী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলন পরিচালনার সময় শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেন নি। তবে তিনি শাসক ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
প. সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব: ফরায়েজি সমাজ প্রচলিত জাতিভেদ প্রথার বিরোধী ছিল। সকল মানুষ ভাই ভাই এবং সকাল সমান ফরায়েজিদের প্রচারিত এ আদর্শ সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে নতুন আকার জন্ম নেয়। এর ফলে সকল শ্রেণীর লোকজন দলে দলে ফরায়েজি আন্দোলনে যোগদান করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জুলুন ও শোষণে বাংলার কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বিষহ হয়ে উঠে। মুসলমান সম্প্রদায়ের কুসংস্কার ও কুপ্রথা সমাজব্যবস্থাকে অন্ধকারময় করে তোলে। বাংলার উপেক্ষিত, অত্যাচারিত নির্ধাতিত, বঞ্চিত ও শোষিত গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে হাজী শরীয়তুল্লাহর এ ফরায়েজি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানদের উন্নয়ন ও সংগঠিত করতে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান চিরস্মরণীয়।