ফরায়েজি আন্দোলনের রাজনৈতিক দিক ব্যাখ্যা কর।

ফরায়েজি আন্দোলনের রাজনৈতিক দিক ব্যাখ্যা কর।

 

 

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে যে কয়টি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল ফরায়েজি আন্দোলন ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় সংস্কারের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং জমিদার শ্রেণী ও নীলকরদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াই ছিল এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য। প্রাথমিকভাবে হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনকে সংগঠিত এবং পরিচালনা করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সুযোগ্য পুত্র মোহাম্মদ মহসীন ওরফে দুদু মিয়া এ আন্দোলনকে একটি কাঠামোগত রূপ দেন এবং খুব দ্রুত সমগ্র দেশব্যাপী বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হন। এভাবে একপর্যায়ে এ আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

 

রাজনৈতিক দিক: হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এ সময়ই ফরায়েজিরা জমিদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করে এবং ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হতে ফরায়েজি আন্দোলনের প্রকৃতি রাজনৈতিক রূপে পরিণত হয়। দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের তাগিদে প্রসারিত করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:আন্দোলন পরিচালনা এবং মানতি লাভের জন্য দুদু মিয়া জালালউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে এক সুদক্ষ লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন।

জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার হতে বাংলার কৃষকদের রক্ষা করার জন্য গ্রামীণ সংগঠন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবিত করেন এবং এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। ফরায়েজিরা অবৈধভাবে ধার্যকৃত কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে জমিদাররা ফরায়েজিদের উপর অত্যাচার শুরু করে। বিশেষ করে কানাইপুরের শিকদার ও ফরিদপুরের ঘোষ পরিবার। এমতাবস্থায় দুদু মিয়ার নেতৃত্বে কানাইপুরের শিকদার এবং ফরিদপুরের জয়নাল ঘোষের জড়িত হামলা চালানো হলে তারা ভীত হয়ে পড়ে এবং ফরায়েজিদের উপর হামলা বন্ধ করে দেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ফরায়েজি আন্দোলন অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ ধরে এক সময় রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ১৮৬১ সালে দুদু মিয়ার মৃত্যু হলে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ফরায়েজি আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।