রমজানে ইবাদত আত্মশুদ্ধি ও উপলব্ধিকরণ

 

 

 

রমজানে ইবাদত আত্মশুদ্ধি ও উপলব্ধিকরণ

পবিত্র রমজানকে হাদিসে ‘শাহরুল আজিম’ ‘শাহরুল মুবারাকাত’ বলা হয়েছে। এ মাসের সব মুহূর্ত, সব কাজ মহাপ্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিবেদন করাই মুমিন বান্দার একমাত্র কর্তব্য। এ মাসের শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ, পরিশীলন ও অধ্যাত্মজাগরণে মানুষ প্রমাণ রাখে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহান স্রষ্টার ‘প্রতিনিধিত্বে’র যোগ্যতা। এ মাসের ইবাদতের মধ্য দিয়ে মানুষ অর্জন করে ‘সিফাতে রব্বানি’ (আল্লাহর গুণে গুণান্বিত)। কেননা, এ মাসে ঘোষণা করা হয়—‘হে ভালোর অন্বেষী অগ্রসর হও, মন্দের অন্বেষী থামো।’ (তিরমিজি )

 

রমজান মাস অন্তত চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র মর্যাদার দাবিদার : (ক) এ মাসে কোরআন নাজিল হয়, (খ) এ মাসেই আছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ‘লাইলাতুল কদর’, (গ) এ মাসে শয়তান বন্দি থাকে, (ঘ) এ মাস মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল।

 

 

অনাচার, অসভ্য, অসত্যের নিকষ অন্ধকারের অবসান ঘটাতে মহাসত্যের চিরন্তন জ্যোতিষ্ক মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয় পবিত্র রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম রজনী ‘লাইলাতুল কদরে’, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান মক্কার হেরা পর্বতের গুহায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহিমান্বিত রমজান মাস, এতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

 

 

 

এ মাসেই অন্য আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়। যথা—জাবুর ৬ রমজান, তাওরাত ১ রমজান, ইঞ্জিল ১২ রমজান। বিশ্বমানবতার মুক্তি অন্বেষায় প্রিয় নবী (সা.)-এর ‘হেরা গুহা’য় দীর্ঘ ধ্যানমগ্নতার পর কোরআন নাজিলের শুভসূচনা হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে। ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে আসেন এবং বলেন, ‘ইকরা’ (পাঠ করুন), প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মা আনা বি-ক্বারি’ (আমি তো পড়তে জানি না)। তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) প্রিয় নবী (সা.)-এর সঙ্গে তিনবার আলিঙ্গন করলেন এবং বললেন ‘ইকরা’। তখনই প্রিয় নবী (সা.) পড়তে শুরু করলেন ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক…’—‘পাঠ করো মহিমান্বিত প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন…তিনি তো মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানত না।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ১-৫)

 

এভাবেই শুরু হয়ে ২৩ বছরের দীর্ঘ কাল পরিক্রমায় মক্কা-মদিনায় অবতীর্ণ হয় (৯২+২২) ১১৪টি সুরা এবং আল-কোরআনের সর্বশেষ আয়াত হিসেবে বিদায় হজের সময় অবতীর্ণ হয় সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াত।

 

রমজান মাসেই জামাতের সঙ্গে নামাজরত অবস্থায় শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শোনার সৌভাগ্য হয় মূলত তারাবির কল্যাণে। আল-কোরআনে ৫৪০টি রুকু আছে, ৫৪০ ভাগ ২৭=২০ রাকাত তারাবির জামাতে পুরো কোরআন শোনা বা ৩০ গুণন ২০= ৬০০ রাকাত নামাজ জামাতে আদায় কতই না মূল্যবান। সাধারণভাবে বলা হয় পবিত্র কোরআনে আয়াত-৬২৩৬, শব্দ-৭৭৯৪, অক্ষর-৩২৩৭৬০টি এবং আল্লাহ শব্দটি ২৫৮৪ বার, যা নামাজে শোনার কারণে বান্দাকে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। পবিত্র কোরআনের হেফাজত ও মহান আল্লাহর ইবাদতের অন্যতম মাধ্যম ‘তারাবির নামাজ’। এর মাধ্যমেই মহান আল্লাহর শাহি দরবারে বান্দার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। শুধু তারাবির জামাতের সঙ্গে ১২০০ বার সিজদা করাও কতই না সৌভাগ্যের বিষয়। ইফতারির পর শ্রান্ত-অবসন্ন দেহ যখন একটু বিশ্রামকাতর, তখনই দূর মিনারে ধ্বনিত হয় ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ তাই আবারও ছুটে চলা মসজিদে, এ তো তারাবির আকর্ষণ, এ তো মহান আল্লাহর বাণীর নিত্যতা ‘তারা তো এমন লোক যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে না…।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩৭)

 

 

 

 

বস্তুত রমজান ও আল-কোরআনের সম্পর্ক অত্যন্ত সুনিবিড়। রমজানে মুসল্লির ভিড়ে-ভারে ভরা মসজিদের বারান্দা ও ছাদ, ঘরে ঘরে শোনা যায় কোরআনের আওয়াজ—আকুল-ব্যাকুল হয়ে পাপমোচন ও মহান আল্লাহর তুষ্টিতে ব্যস্ত এবং ইবাদতের কল্যাণে পরিশুদ্ধ সবাই। এভাবেই পবিত্র রমজান মাস মানুষের মধ্যে ‘তাকওয়া’ বা ধর্মভীরুতা সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ, ‘লা-আল্লাকুম তাত্তাকুন’ অর্থাৎ যেন তোমরা ধর্মভীরুতা অর্জন করতে পারো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)