ইসলামের ইতিহাসের জনক কে?
ইসলামের ইতিহাসের জনক বলা হয় আল মাসুদীকে। তার পুরো নাম আবু আল-হাসান আলী ইবন আল-হুসাইন আল-মাসুদী, যিনি একজন আরব পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ১০ম শতাব্দীতে ভারতে এসেছিলেন। তার জীবনের লম্বা সময় তিনি ভ্রমণেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন যা তিনি তার ”মুরুজ-উল জাহাব (সোনার তৃণভূমি) বইতে উল্লেখ করেছেন।
আল-মাসুদী শুধু ইতিহাসের লেখকই ছিলেন না তিনি বৈজ্ঞানিক ভূগোলকেও তার লেখনীতে অসাধারণভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। এই জন্য তাকে “আরবদের হেরোডোটাস” বলা হয়। তিনি আরবদের মাঝে বেশ বিখ্যাত ছিলেন তার লেখনীর জন্য। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, তিনি তার জীবনে ৩৪ টিরও বেশি বই লিখেছেন।
আল মাসুদীর ব্যক্তিগত জীবন
আল মাসুদী ১ম শতাব্দীর শেষের দিকে ইরাকের বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন যদিও তার জন্মের সঠিক বছর সম্পর্কে জানা যায়নি। আল মাসুদি যিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদের বংশধর, নবী হযরত মুহাম্মদের একজন সাহাবী ছিলেন। ভূগোল ও ইতিহাসের উপরে তার অসংখ্য সমৃদ্ধশালী লেখা রয়েছে এছাড়াও তিনি সৃষ্টিতত্ত্ব, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, ভূমিরূপ অধ্যয়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, ইসলামী আইন এবং আরবি লোককাহিনীতে অবদান রেখেছেন।
তার বিখ্যাত লেখনীর মধ্যে রয়েছে আখবার আল জামান (সময়ের ইতিহাস), কিতাব আল-আওসাত (বুক অফ দ্য মিডল), মুরুজ আল-ধাহাব ওয়া মা’দিন আল-জাওয়াহির (সোনার তৃণভূমি এবং রত্নগুলির খনি), কিতাব আত-তানবিহ ওয়া-ল-ইশরাফ (বুক অফ অ্যাডমোনিশন অ্যান্ড রিভিশন), কিতাব মুরুজ আল-ধাহাব ওয়া মা’দিন আল-জাওহার, কিতাব আল তানবিহ ওয়া আল-ইশরাফ (বিজ্ঞপ্তির বই এবং যাচাইকরণ) এবং আরো বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া বই।
আল-মাসুদী একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছিলেন। দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে তিনি তার বইয়ের রসদ জোগাড় করতেন আর এই জন্যই তাকে “আরবদের হেরোডোটাস বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি সিরিয়া থেকে শুরু করে কাস্পিয়ান সাগরের তীরে, ইরান, আর্মেনিয়া, সিন্ধু, উপত্যকা, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকার পূর্ব উপর, ওমান, জাঞ্জিবার পর্যন্ত দক্ষিণে এবং সম্ভবত মাদাগাস্কার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যদিও তার পারস্য, ভারত পূর্ব আফ্রিকা এবং চীন ভ্রমণ নিয়ে তেমন জিজ্ঞাসা করা হয় না। দীর্ঘ সময় দেশ-বিদেশ পরিদর্শন শেষে তিনি ১৪৭ খ্রিস্টব্দে ফুসটাতে (আধুনিক কায়রো) বসতি স্থাপন করেন। তারপর তিনি ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সেখানে মারা যান।
ইসলামের ইতিহাসের জনক কে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন এমন এক গ্রন্থ যেখান আদম (আ:) থেকে শুরু করে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুহাম্মদের মানবজাতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক ভিত্তি গঠণ করে। ইসলামের ইতিহাসের আরেকটি মূল্যবান সম্পদ হলো হাদিস যা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যার মাধ্যমে যারা কাছ থেকে নবীর কাজ দেখেছেন, নবীকে চিনিছেন তাদের প্রত্যক্ষ করা বিষয়গুলোই লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার ইতিহাস সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় কারণ ইসলামের অনেক ইতিহাস কোরআনেই সরাসরি বর্ণিত হয়েছে মহান রাব্বুল আলামিনের মাধ্যমে। পরে প্রিয় নবী ও সাহাবীদের মাধ্যমে হাদীস বিভিন্ন বই লেখার মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হতে থাকে। তাই ইসলামের ইতিহাসের জনক কে এই প্রশ্ন আসলে যার কথা প্রথমে আসে তিনি হলেন আল-মাসুদী যিনি “আরবদের হেরোডোটাস” নামে পরিচিত। কারণ তিনি শুধু ইসলামের ইতিহাস নয় বিভিন্ন দেশের ভৌগলিক অবস্থা, ইতিহাস ও সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে এত বিস্তারিতভাবে লিখেছেন যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয়টি পাওয়া যায় না.