নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদের ইতিহাস

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিলো, তখন ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলা হয়। সেই মসজিদে বাংলাদেশে ক্রিকেট দল জুমুআর নামাজ পড়ার কথা ছিলো। ৫১ জন মুসলিম ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহত হোন।
নিউজিল্যান্ডে যে মুসলিমরা বসবাস করে, সেখানেও যে উল্লেখযোগ্য মসজিদ আছে সেটা সেই ঘটনার পর অনেক সাধারণ মানুষ জানতে পারে।
ভারতের গুজরাটের একটি পরিবার ১৮৫০ সালের দিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গিয়ে বসবাস করে। স্বর্ণের খনি খনন করার জন্য চীনের ১৫ জন মুসলিম নিউজিল্যান্ডে যায়। ১৮৭৪ সালে নিউজিল্যান্ডের আদমশুমারিতে তাদের কথা উল্লেখ আছে। মুহাম্মদ ড্যান নামের জাভার একজন নাবিক ১৮৮৮ সালে নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে ইন্তেকাল করেন। ধরে নেয়া হয়, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে শায়িত প্রথম মুসলিম ছিলেন মুহাম্মদ ড্যান

পৃথিবীর দক্ষিণের সর্বশেষ মসজিদ

নিউজিল্যান্ডের যে শহরে মুহাম্মদ ড্যান ইন্তেকাল করেন, সেই শহরে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের নাম আল-হুদা জামে মসজিদ। এই মসজিদটি পৃথিবীর একেবারে দক্ষিণের সর্বশেষ মসজিদ। এই মসজিদের পর পৃথিবীর দক্ষিণে আর কোনো মসজিদ নেই। নিউজিল্যান্ড দেশটাই পৃথিবীর সর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত।
ইউরোপের দেশগুলোর মতো নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় অভিবাসীদের মাধ্যমে। নানান সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিমরা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া থেকে মুসলিমরা নিউজিল্যান্ডে যায়। অভিবাসীদের ঢল বেড়ে যায় ১৯৯০ সালের পর।
নিউজিল্যান্ডের মুসলমানদের মাথার ছায়ার মতো সংগঠন ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ড (FIANZ)। ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হোন মাজহার ক্রাসনিকী। একই বছর একটি ইন্টার্ভিউতে নিউজিল্যান্ডের ধর্মান্তরিত মুসলিম সম্পর্কে তিনি বলেন:

“নিউজিল্যান্ডের অনেকেই আরব দেশে ঘুরতে যাচ্ছে, আরব মুসলিমদের সাথে মিশছে। দেশে এসে দেখা যায় তারা ইসলাম গ্রহণ করছে। প্রতি সপ্তাহে ধর্মান্তরিত মুসলিমের সংবাদ আমাদের কাছে আসে।”

 

 

 

 

 

 

 

 

পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ডক্টর হাজী আশরাফ ১৯৮৪-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের এমপি নির্বাচিত হোন।
সনি বিল উইলিয়ামস নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত রাগবি খেলোয়াড় ও বক্সার। ২০০৪ সালে তিনি RLIF অ্যাওয়ার্ড পান, ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হোন। কয়েকবছর আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
নিউজিল্যান্ডের ফেডারেশন অফ ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশানের প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ আনোয়ার ঘানি বলেন:

“মুসলিমরা নিউজিল্যান্ডে মূলত অকল্যান্ড, হ্যামিলটন, ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চ ইত্যাদি শহরে বাস করেন। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে বেশি পরিমাণে ছাত্ররা আসার ফলে ডুনেডিন ও উত্তর পামেরস্টনে এখন মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।”

দেশটির খ্যাত মসজিদ হলো আন-নূর মসজিদ। নিউজিল্যান্ডে এক সময়ে এই মসজিদকে ‘ইসলামের মণিমুক্ত’ বলা হতো। ক্যান্টারবেরীর মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে আন-নুর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময় সৌদি আরব সরকার নিউজিল্যান্ডকে ৪,৬০,০০০ ডলার দান করেছিলেন এই মসজিদের নির্মাণের জন্য।
নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ১.৩%। আস্তে আস্তে সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে।