পাবনার কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান?

পাবনার কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান?

 

 

ভূমিকা: ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থা বাংলার কৃষি ও কৃষক সমাজকে শোচনীয় করে তোলে।” কোম্পানির রাজস্বনীতির কারণে এবং মুনাফাপ্রসূত রাজস্বনীতির ফলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে বাংলার বিভিন্ন স্থানে কৃষক বিদ্রোহ দেখা যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার পাবনার কৃষক বিদ্রোহ অন্যতম স্থান দখল করে আছে। নিম্নে পাবনার কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

 

পাবনার কৃষক বিদ্রোহ: পাবনার কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৮৭২ সালে। নীল বিদ্রোহের মতোই পাবনা বিদ্রোহে ছোট জমিদার বা জোতদাররাই প্রাথমিক ও প্রধান নেতৃত্ব দেন। দশনি চন্দ্র রায় নামে তালুকদার, প্রজারা যাকে বিদ্রোহী রাজা বলত শম্ভুনাথ পাল, এক গ্রামীণ জোতদার ক্ষুদিরাম মোলা এক মুসলিম জোতদার এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।

এ বিদ্রোহের কারণ ছিল দুর্নীতি রোধ, খাজনা বৃদ্ধি রোধ, অবৈধ অর্থ আদায় রোধ, কৃষকদের অধিকার জাগ্রত করা এবং তাদেরকে একটি সাংগঠনিক কাঠামোতে নিয়ে আসা। অধ্যাপক সুনীল সেন তার ‘ভারতের কৃষক আন্দোলন’ গ্রন্থে লিখেন, খাজনার প্রশ্ন নিয়ে কিভাবে জমিদার ও প্রজার মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তা পাবনা বিদ্রোহের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।”

 

মূলত জমিদাররা ছিল অত্যাচারী, শোষণকারী, লোভী। জমিদাররা অকারণে নিঃস্ব দরিদ্র কৃষকদের উপর খাজনা দাবি করতো। তাই অবৈধ অর্থ আদায় বন্ধ করার জন্য পাবনার কৃষকরা সংগঠিত হয়ে কৃষক বিদ্রোহ করে। ড. কল্যাণ কুমার সেনগুপ্তের মতে, পাবনার কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল জমিদার কর্তৃক কৃষক বা রায়তদের নবলব্ধ অধিকার অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করা।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, পাবনার কৃষক বিদ্রোহ ছিল বাংলার কৃষকদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ। পাবনার কৃষক বিদ্রোহ শুধু পাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এ বিদ্রোহ বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদেরও গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ঢাকা, ত্রিপুরা, বগুড়া প্রভৃতি স্থানে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলে।