সশস্ত্র বিদ্রোহ কী?

সশস্ত্র বিদ্রোহ কী?

 

ভূমিকা: ইংরেজদের শোষণমূলক রাজস্বনীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, দেশীয় বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, দেশীয় রীতিনীতি বিরোধী কার্যকলাপের কারণে বাংলার জনজীবন দুঃসহ হয়ে উঠে। ফলশ্রুতিতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ বিদ্রোহগুলোই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ নামে পরিচিত।ইসলামের ইতিহাস (১৬৭৪)

 

সশস্ত্র বিদ্রোহ: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার স্থানীয় প্রভাবশালীরা দেশের অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে। এসময়ে দেশ, জাতি, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি বিষয়ে বাঙালি জনগণ সজাগ ছিল না; কিংবা এসব সমস্যা তাদের জীবনধারার অন্তর্গত ছিল না। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক Bipan Chandra বলেছেন, “ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষক আন্দোলন এবং জনপ্রিয় গণজোয়ারের কোন পর্যায়েই ভারতে ব্রিটিশ প্রাধান্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে নি।” (At no stage did the peasant movement and popular up-rising of the 19th Century threaten British superemacy over India.) [Nationalism and Colonialism in Modern India.]

 

 

 

 

বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এসব বিদ্রোহ সংঘটিত না হলেও গুরুত্বের দিক থেকে এগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮১৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো নিম্নরূপ:

 

১. ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ,

 

২. বলাকী শাহের বিদ্রোহ,

 

৩. আগা মোহাম্মদ রেজার বিদ্রোহ,

 

৪. চাকমা বিদ্রোহ,

 

৫. পাগলপন্থি বিদ্রোহ,

 

৬. চুয়াড় বিদ্রোহ,

 

৭. বেরিলির বিদ্রোহ,

 

৮. উড়িষ্যার পাইক বিদ্রোহ,

 

৯. সাঁওতাল বিদ্রোহ,

 

১০. আদিবাসী আন্দোলন,

 

১১. পাবনা বিদ্রোহ,

 

১২. দাক্ষিণাত্যের কৃষক বিদ্রোহ।

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার, শোষণমূলক রাজস্বনীতি, দেশীয় প্রথা রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারিত শাসনরীতির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে, বিরোধিতা এবং সশস্ত্র বিদ্রোহে ঝাপিয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।