ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান বর্ণনা কর।

ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান বর্ণনা কর।

 

ভূমিকা : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ শুরু হয়। এরপর ১৭৫৭ সাল থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত ‘নবাব’ নামধারী মীরজাফরের বংশধর কয়েক জন শাসককে সামনে রেখে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসন ও শোষণ চালাতে থাকে। ইংরেজদের শোষণমূলক রাজস্বনীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, দেশীয় বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, দেশীয় রীতিনীতি বিরোধী কার্যকলাপের কারণে বাংলার জনজীবন, দুঃসহ হয়ে উঠে। ফলশ্রুতিতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ বিদ্রোহগুলোই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

 

ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ হলো ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ ১৭৬০ সাল থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখে ফকির ও সন্ন্যাসীদের মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষার উদ্রেক হয়। সাধারণত আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত এ নিরীহ সাধক-সম্প্রদায় এসময় তাদের পার্থিব আকাঙ্ক্ষা মিটাতে সুযোগ পায়। তারা বাংলাদেশে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পলাশী যুদ্ধের পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে ফকির ও সন্ন্যাসীগণ বিদ্রোহী হয়ে বাংলাদেশে তাদের প্রাধান্য স্থাপন করার কাজে নিয়োজিত হয়। শাহ মজনু মাজযুব নামক নেতার পরিচালনাধীনে ফকিরগণ এ ব্যাপারে অগ্রণী হয়। চাকরি হারা অনেক সৈনিক ও দুর্দশাগ্রস্ত বহু কৃষক এদের সাথে যোগ দেয়। ও ম্যালের মতে, “বিদ্রোহীদের সংখ্যা একসময় পঞ্চাশ হাজারে উন্নীত হয়েছিল। ফকির মজনুশাহ ও ভবানী পাঠক ছাড়াও এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন মুসাশাহ, চেরাগ আলী শাহ, সোবহান শাহ, করিম শাহ, মাদারবক্স প্রমুখ ফকির সন্ন্যাসী ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ।”

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির ফলে ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় তবুও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ পরবর্তীকালে অন্যান্য বিদ্রোহকে এবং সর্বোপরি স্বাধীনতা সংগ্রামকে উজ্জীবিত করেছিল।