রংপুর কৃষক বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট কী ছিল?

 

 

রংপুর কৃষক বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট কী ছিল?

ভূমিকা: ইংরেজদের দ্বৈতশাসন নীতি, শোষণমূলক রাজস্ব নীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবহার পরিবর্তন, দেশীয় রীতিনীতি বিরোধী কার্যকলাপ দেশীয় বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি কারণে এ দেশের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। এসব কার্যকলাপ অত্যাচার ও অবিচার বাংলার কৃষকরা সবসময় নীরবে সহ্য করে নি।কোন কোন সময় তারা অত্যাচারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। রংপুর কৃষক বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট: ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর হয়ে এসে তাঁর অনুগত অনুচর দেবী সিংহকে রংপুর ও পূর্ণিমা জেলার রাজস্ব সংগ্রহের ত্রিবর্ষীয় ইজারা দিয়েছিল। দেবী সিংহ নানাভাবে অত্যাচার করে অতিরিক্ত কর আদায় করতো। ১৭৮০ সালে দেবী সিংহকে দিনাজপুরের নাবালক রাজারও দেওয়ান নিযুক্ত করা হয়। ১৭৮০ সালে জেলার সদর জমা অর্থাৎ সরকারকে দেয় রাজস্বের পরিমাণ ছিল আট লক্ষ এগার হাজার টাকার সিক্কা টাকা। ১৭৮১ সালে রাজা দেবী সিংহ আট লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা অর্থাৎ চৌষট্টি হাজার টাকার অধিক রাজস্ব ইজারা নেন। এ বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহ করার জন্য দেবী সিংহ কৃষকদের উপর নানারকম নতুন কর আরোপ করেন এবং ঐসব কর আদায়ের জন্য জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ করেন। হরেরাম নামক দেবী সিংহের একজন সহকারী ছিল এ অত্যাচারের প্রধান নায়ক। গরিব প্রজাগণ কর পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদেরকে নির্মমভাবে বেত মারা হতো এবং আলোবায়ুহীন ঘরের ভিতরে বন্দি করে রাখা হতো। দেবী সিংহের বর্বরোচিত অত্যাচার থেকে মহিলাগণও রেহাই পেত না। তার পাশবিক অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বহু প্রজা বাড়িঘর ছেড়ে বনে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতো। প্রজারা দেবী সিংহের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জেলা কালেক্টরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিন্তু তাতেও কোন ফল লাভ হয় না। দেবী সিংহ অতিরিক্ত রাজস্ব প্রদানের শর্তে ইজারা নিয়েছিলেন কাজেই তার কার্যকলাপের প্রতি ইংরেজ কোম্পানির সমর্থন ছিল।

 

উপংসহার: ১৮৭৩ সালের কৃষকবিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। শান্তিপ্রিয় বাংলার কৃষকগণ যে নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন তা এ বিদ্রোহ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিদ্রোহের আদর্শই পরবর্তীকালে বাঙালির প্রতি ইংরেজদের নানা অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা যুগিয়েছিল।