ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জান লিখ।

ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জান লিখ।

 

 

ভূমিকা : বাংলায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকেই প্রথম কৃষকবিদ্রোহ বলা যায়। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৭৬৩-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওয়ারেন হেস্টিংস প্রভৃতি রাজপুরুষেরা এ বিদ্রোহকে হিন্দুস্থানের যাযাবর, পেশাদার, ডাকাতদের উপদ্রব বলে বর্ণনা করেছেন।

 

সন্ন্যাসী বিদ্রোহ: বাংলায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকেই প্রথম কৃষকবিদ্রোহ বলা হয়। যামিনী মোহন ঘোষ ও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার বাইরে থেকে আগত নাগা ও ভোজপুরি দস্যু বলে সন্ন্যাসীদের অভিহিত করেছেন। কিন্তু সরকারি বেসরকারি দলিল থেকে জানা যায় যে, এ বিদ্রোহ ছিল বাংলা ও বিহারের কৃষক শ্রেণির বিদ্রোহ। বিদ্রোহীরা সর্বত্রই ভূমিহীন নিরন্ন কৃষকদের সমর্থন পান। বিদ্রোহীরা কেবলমাত্র জমিদার মহাজনদের গৃহ লুটপাট করে, ইংরেজদের রাজকোষ লুটপাট করে, কৃষকদের উপর কোন উৎপীড়ন করেন নি। উইলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম এ বিদ্রোহকে কৃষকবিদ্রোহ নামে অভিহিত। তিনি এ ‘বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের শ্রেণি বিচার করে বলেন, বিদ্রোহ সন্ন্যাসীদের দলে ছিলেন।

 

ক. মুঘল সাম্রাজ্যের ভাঙনের ফলে বেকার সেনাগণ।ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেণি।

 

খ. গ. সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিভিন্ন সম্প্রদায় যারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এ বিদ্রোহীদের সংখ্যা এক সময় ৫০ হাজারে পৌঁছায়। হান্টার যে বেকার মুঘল সেনার কথা বলেছেন, তারা ছিল বাংলা বিহারের কৃষক সন্তান। অন্ন ও বস্ত্রের জন্য তারা বিদ্রোহে যোগদান করে। এ বিদ্রোহীদের অনেকে ফকির ও সন্ন্যাসীদের বেশ নেয়। ও বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী প্রমুখ। এরা ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার ব্রত নেয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলা- বিহারের দগ্ধ শ্মশান ভূমি থেকে এ বিদ্রোহীদের আবির্ভাব হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষকরা এ নেতার ডাকে ঔপনিবেশিক সরকারকে উচ্ছেদের জন্য অস্ত্র ধরে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যধিক হারে রাজস্ব ধার্য, কৃষকের জমি থেকে উচ্ছেদ, গ্রাম সমাজের ধ্বংস দুর্ভিক্ষের ও মহামারীর প্রকোপ এ বিদ্রোহকে বাংলা বিহারে ছড়িয়ে দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ন্যাসীরা কৃষকদেরকে সংঘবদ্ধ করার জন্য ধর্মের বাণী শুনিয়ে দেন। ফলে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় কোম্পানির শাসনামলে মজনু শাহ, ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর নেতৃত্বে যে বিদ্রোহ দেখা দেয় তা ছিল কোম্পানির শাসনের ইতিহাসে একটি আলোচিত অধ্যায়। কারণ এ বিদ্রোহ ছিল নিরস্ত্র ভারতবাসীর সশস্ত্র ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।