মজনু শাহ ও ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জান লিখ?
ভূমিকা: অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস ছিল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। কারণ এ সময়কালে ভারতবর্ষে কোম্পানির সরকার তথা ব্রিটিশ সরকারের স্বৈরাচারী নীতির কারণে অসংখ্য বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। বাংলায় এভাবে পূর্বের ধারাবাহিকতায় ফকির সন্ন্যাসীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। যার মধ্যে ফকির মজনু শাহ অন্যতম।
মজনু শাহ ও ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ: ১৭৬৩ সালে ঢাকার ইংরেজ কুঠির উপর বিদ্রোহীরা প্রথম আঘাত হানে এরপর রাজশাহীর রামপুর কুঠি আক্রমণ। ১৭৬৭ সালে পাটনায় জমিদারদের গৃহ আক্রমণের শিকার হয়। ১৭৭০ সালে পুর্নিয়ার ইংরেজ বাহিনীর সাথে খণ্ডযুদ্ধে বিদ্রোহীরা সরান্ত হয়ে নাবিদ্রোহীরা দিনাজপুর ও উত্তর বাংলায় মহাস্থানগড়ের প্রাচীন দুর্গে আশ্রয় নেয় এবং মজনু শাহের নেতৃত্বে ইংরেজ সেনাপতি লে টেলরের সাথে যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে মজনু শাহ বিহারে চলে যান। মজনু শাহ রাণী ভবানীকে সাহায্যের জন্য একখানি পত্র দেন। মজনুর প্রভাবে কৃষকরা ইংরেজকে কর প্রদান বন্ধ করে দেয়। ১৭৭২ সালে রংপুরের যুদ্ধে বিদ্রোহীদের ইংরেজ সেনাপতি ক্যাপ্টেন টমাসকে নিহত করে এবং ইংরেজ সেনাদের পরাস্ত করেন। ১৭৭৩ সালে ১ মার্চ সন্ন্যাসী ফকির যোদ্ধাদের আক্রমণে ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ডের বাহিনী বিধ্বস্ত হয় এবং এডওয়ার্ড নিহত হন। ১৭৭৬ সালে এক পর্যায়ে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। এরপর ফকির ও সন্ন্যাসীরা পৃথক পৃথকভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়। ১৭৮৬ সালে বগুড়া জেলায় মথুরার যুদ্ধে ইংরেজ সেনার গুলিতে আহত হয়ে মজনু শাহ প্রাণ ত্যাগ করেন। মজনু শাহের পর মুসা শাহ ফকিরদের সংঘবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ইংরেজ বাহিনীর কাছে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় কোম্পানির শাসনামলে মজনু শাহ ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর নেতৃত্বে যে বিদ্রোহ দেখা দেয়, তা ছিল কোম্পানির শাসনের ইতিহাসে একটি আলোচিত অধ্যায়। কারণ ও বিদ্রোহ ছিল নিরস্ত্র ভারতবাসীর সশস্ত্র ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।