ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ৪টি কারণ ব্যাখ্যা কর।

ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ৪টি কারণ ব্যাখ্যা কর।

 

 

 

ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংস ফকির এবং সন্ন্যাসীদের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাত বলে অভিহিত করেন। কেউ কেউ এদের নাগা ও ভোজপুরি দস্যু বলে অভিহিত করেন। কিন্তু তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারের দলিলপত্র এদের আবার বাংলা বিহারের কৃষক শ্রেণি বলেও উল্লেখ করেন। ভারতীয় সিভিলিয়ান উইলিয়াম হান্টার সন্ন্যাসী

 

বিদ্রোহকে কৃষকবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেন। নিম্নে ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ৪টি কারণ উল্লেখ করা হলো:

 

 

১. মুঘল সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দেয়া: ব্রিটিশগণ ভারত দখল করে এক সময় মুঘল বাদশাহের সেনাবাহিনী ভেঙে দেয়। বাংলা বিহার শনা বেকার হয়ে পড়ে এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এরা বিভিন্ন সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। কেউ বাংলা বিহার ও অন্যান্য অঞ্চলে লুটপাট এরা বামাক বিরোবাংলা, বিহার অঞ্চলের অনেকে তাদের পূর্বতন কৃষি পেশায় ফিরে আসে। কিকাজি করাকে পেশা কিস্তোরা ফকির ও সন্ন্যাসী বেশে ডাকাতি ও লুটপাট চালায়। তারা জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের কোষাগারে হামলা চালাতো।

 

২. কৃষকদের দারিদ্র্য: পলাশীর যুদ্ধের পর এদেশের কৃষকগণ নানান শোষণ ও বঞ্চনার ফলে ব্যাপকভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ে। এসব কারণে তারা ফকির ও ও সন্ন্যাসীর সন্ন্যা দলে যায়। তাদের লেবাস পরিধান করে ডাকাতি ও লুটপাটকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নবগঠিত ব্রিটিশ প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এজন্য ব্রিটিশরা এদের ডাকাত বলেমঅভিহিত করে, তবে তারা ডাকাত ছিল না, সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতিও তারা করে নি।

 

৩. ব্রিটিশদের ফকির সন্ন্যাসীদের প্রতি দুর্ব্যবহার: ব্রিটিশগণ ফকির সন্ন্যাসীদের মুষ্টিভিক্ষা বন্ধ করে দেয়। ফকির সন্ন্যাসীরা এটা মেনে নিতে পারে। নি। এটা ছিল তাদের জীবিকার পথ। এটাকে তারা নিজেদের ব্যক্তিত্বের উপর আঘাত হিসেবে গ্রহণ করে এবং ব্রিটিশদের উৎখাতের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে।

 

কিন্তু এদেশীয় মানুষের মধ্যে তখনো জাতীয় চেতনার সঞ্চার হয় নি। তাই ফকির ও সন্ন্যাসীগণ জনসমর্থন পায় নি। তবুও পঞ্চাশ হাজার ফকির ও সন্ন্যাসী দেশীয় অস্ত্রেরমমাধ্যমে কিছু কাল ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছিল।

 

৪. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর: পলাশীর যুদ্ধের ১১ বছর পর বাংলায় এক মহা দুর্ভিক্ষ দেখা হয়। এত বড় দুর্ভিক্ষ বাংলায় আর কখনো ঘটে নি। একে বলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এ দুর্ভিক্ষে বাংলায় মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মারা যায়। গ্রাম, জনপদ শ্মশানে পরিণত হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কৃষকগণ ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহে প্রায় ৫০,০০০ লোক ছিল। তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, সংগঠন ও নেতৃত্ব থাকলে ব্রিটিশদের পক্ষে তাদের দমন করা কঠিন ছিল। কিন্তু অস্ত্রশস্ত্র সমন্বয়, নেতৃত্ব ও জনসমর্থনের অভাবে তারা পরাভূত হয়।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল। কে বা কারা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে সে সম্পর্কে কোন ঐকমত্য ছিল না। নীতি, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য সম্পর্কেও তাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল। তারা কখন, কোথায় এবং কিভাবে আক্রমণ পরিচালনা করবে সে সম্পর্কেও তাদের মধ্যে মতভেদ ছিল। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক প্রশ্নেও তাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এসব অনৈক্যের কারণে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম ব্যর্থ হয়।