কৃষক বিদ্রোহের ফলাফল বর্ণনা কর।
ভূমিকা: ভারতের আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির মতো কৃষক সম্প্রদায়ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে শ্রেণি চেতনা সমৃদ্ধ সংগঠিত রাজনৈতিক আন্দোলন কৃষক সমাজের তুলনায় বহু পূর্বে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে শুরু হয়। নেতৃত্ব ও চেতনার অভাব জমিদারদের নির্মম অত্যাচার কৃষক সমাজকে পঙ্গু করে তুলেছিল। নিম্নে কৃষক বিদ্রোহের ফলাফল তুলে ধরা হলো:
কৃষক বিদ্রোহের ফলাফল: নিম্নে কৃষক বিদ্রোহের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. উদ্বুদ্ধ কৃষক সমাজ: কৃষক আন্দোলনে বামপন্থি বিশেষভাবে কমিউনিস্টগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তাদের প্রচেষ্টায় সংগঠিত হয়। বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিকদল ১৯২৮ সালে গঠিত হয়। নিখিল ভারত কৃষক শ্রমিক দল বিভিন্ন সংগঠনসমূহ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে কৃষক সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণই জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে তারা অন্যান্য শ্রেণি এবং সমাজের সাথে একাত্ম হয়েছে।
২. জাতীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: ঊনবিংশ শতাব্দীর কৃষক আন্দোলনগুলো জমিদার ও মহাজন শ্রেণির বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। অধুনা নিম্নবর্গের সংগ্রাম সম্পর্কিত গবেষকরা মনে করেন যে, ভারতের জাতীয় আন্দোলন কেবলমাত্র Elite বা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হয় নি। এলিট বা মধ্যবিত্তের নেতৃত্বকে অহেতুক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিম্নবর্ণের বিশেষত কৃষক শ্রেণির জাতীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ড. রঞ্জিত গুহ মনে করেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিচালিত জাতীয় আন্দোলন থেকে নিম্নবর্ণের এ আন্দোলন ছিল স্বতন্ত্র ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
৩. রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি কৃষক বিদ্রোহের ফলে কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিংশ শতকে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ কৃষক ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দোলনকে গণআন্দোলনে পরিণত করে। সরকার ভয় পান যে, যদি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কৃষকবিদ্রোহ নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসে তাহলে মধ্যবিত্তের মস্তিষ্ক ও কৃষকের সঙ্গে মিলিত হলে ব্রিটিশের দুর্দিন দেখা দিবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের পরবর্তী সময় সংঘটিত কৃষকবিদ্রোহগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার সহচর জমিদার মহাজন গোষ্ঠীর অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে যে আপসহীন সংগ্রামের মহান ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল তার তুলনা হয় না। ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে কৃষক সমাজ তাদের নিজেদের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।