বাংলার ইতিহাসে কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা কর।
ভূমিকা: বাংলায় কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষকবিদ্রোহ বাংলার কৃষকদের উন্নতি ও প্রগতির সোপান হিসেবে কাজ করে। কৃষক বিদ্রোহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ: ফকির সন্ন্যাসীরা ছিল কৃষক। তারা এদেশের কৃষকদের সন্তান। ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহি ছিল বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ বা সশস্ত্র যুদ্ধ। ফকির ও সন্ন্যাসীরা ব্রিটিশ ও তাদের অনুগতদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও তারা সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি করে নি। এ থেকেই বুঝা যায় যে, এটা ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। এটা কৃষক বিদ্রোহও বটে।
২. জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ বন্ধ করা: কোম্পানি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে একদল ভূঁইফোড়দেরকে জমি চিরদিনের জন্য বন্দোবস্ত দেয়। ফলে কৃষকরা জমির অধিকার হারায়, তাদের জমি হতে উচ্ছেদ করা হয়। এর প্রতিকার না পেয়ে তারা ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকা পালন করে। তাদের সঙ্গে জমিদার ও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এতে কৃষকদের বহু রক্তক্ষয় হয়, তবুও তারা এতে দমে নি। তারা নিরস্ত্রর সংগ্রাম চালিয়ে যায়।। তাদের ত্যাগ বিবরণ আমাদের ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে।
৩. জমিদারদের অত্যাচার বন্ধ: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর এদেশীয় জমিদারগণ প্রজা পীড়ন শুরু করে। তারা খাজনার জন্য প্রজাদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাত, হত্যা গুম, খুন, বেত্রাঘাত, চাবুক ছিল তাদের অস্ত্র এমনকি খাজনা দিতে না পারায় অসহায় কৃষকদের শীতকালে পানিতে নামিয়ে দিত। কৃষক বিদ্রোহের ফলে জমিদারদের এসব অত্যাচার বন্ধ হয়।
৪. নীলকরদের অত্যাচার বন্ধ: ইউরোপীয় নীলকরগণ ছিল ভয়ানক বর্বর ও অত্যাচারী। তারা অবাধ্য নীল চাষিকে নির্মম অত্যাচার করতো। খাবার ও পানীয় বন্ধ করে দিত, চাবুক মারত। এমনকি হত্যা, গুম ও খুন করতো। এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকবিদ্রোহ ছিল মোক্ষম অস্ত্র। কৃষক বিদ্রোহের ফলে নীলকররা পলায়ন করে নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এবং কৃষকগণ মুক্তিলাভ করে। এটা ছিল একটি জগদল পাথর, যা কৃষকদের বুকের উপর বসান ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষক আন্দোলন ব্রিটিশ বিরোধী প্রাথমিক প্রতিরোধ আন্দোলন। এটা চলে ১৭৬০. হতে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত। এসব সংগঠিত আন্দোলন দমন করতে ব্রিটিশদের বহু বেগ পেতে হয়।