কৃষক বিদ্রোহের কারণ কী?

কৃষক বিদ্রোহের কারণ কী?

 

ভূমিকা: কৃষকবিদ্রোহ মূলত কৃষকদের উপর অত্যাচার ও অবিচারের অনিবার্য ফল। জমির খাজনা আদায়ের নামে জুলুম, বিদেশি ও দেশি সাহেবদের হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতা এবং প্রাপ্ত ফসলের ভাগ থেকে বঞ্চনা ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এ বিদ্রোহের নেপথ্য শক্তি হিসেবে বিবেচিত।

 

বাংলায় কৃষক বিদ্রোহের কারণ: বাংলায় কৃষকদের বিদ্রোহের পশ্চাতে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান ছিল।

 

নিম্নে এ কারণগুলো আলোচনা করা হলো:

 

১. ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি: বাংলায় দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করে। এটা করতে গিয়ে তারা কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা না করে নিজেদের স্বার্থ দেখে। তাদের আসল লক্ষ্য ছিল কর বৃদ্ধি করা। এগুলোই কৃষক বিদ্রোহের ইন্ধন যোগায়।

 

২. কৃষকদের শোষণ: ইংরেজ রাজস্ব প্রতিষ্ঠার পর এদেশে একদল নতুন ভূঁইফোড় জমিদার ও তালুকদার শ্রেণির বিকাশ ঘটে। এসব জমিদার ও তালুকদার বিভিন্নভাবে কৃষকদের শোষণ করে। তারা কৃষকদের উপর নানা করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে বাংলায় কৃষকবিদ্রোহ দেখা দেয়।

 

৩. মুদ্রা ব্যবস্থার কুফল: কোম্পানির আসলে শষ্যের পরিবর্তে কর দেয়ার জন্য ধাতব মুদ্রা চালু করে। কিন্তু এটা সহজলভ্য ছিল না। মুদ্রার জন্য তাদের মহাজনের নিকট ধর্না দিতে হতো। কম মূল্যে তাদের দ্রব্যসামগ্রী মহাজনের নিকট বিক্রি করে মুদ্রা সংগ্রহ করতে হতো, ফলে তাদের দুঃখকষ্টের অন্ত ছিল না।

 

 

 

৪. চিরস্থায়ী বন্দোবন্ত: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় চিরস্থায়ী ব্যবস্থা চালু করে। এতে কৃষক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। পূর্বে গোটা সমাজ হতে ভূমি রাজস্ব আদায় করা হতো। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ভারতকে ব্যক্তিগতভাবে রাজস্ব দিতে বাধ্য করা হয়। এটা জমিদারকে জমির মালিকানা দেয়। ফলে কৃষক ভূমিদাসে পরিণত হয়। এটা বাংলায় কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

 

৫. মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থা: মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থাও কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। খাজনা আদায়ের ঝামেলা হতে মুক্ত থাকার জন্য তারা এক শ্রেণির লোককে পত্তন দেয়। এদেরকে পত্তনিদার বলে। এরা আবার তাদের নিচে ক্ষুদ্র জমিদারকে বন্দোবস্ত দেয়, এরা হলো দর পত্তনিদার। এরপর ছিল জোতদার। সর্বনিম্নে ছিল কৃষক বা রায়ত, এসব মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা তাদের ইচ্ছামত ভূমি রাজস্ব বাড়তি যার দায় পড়ত হতভাগ্য কৃষক রায়তের উপর। এজন্য বাংলায় কৃষকবিদ্রোহ ঘটে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের পরবর্তী সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার সচহর জমিদার মহাজন গোষ্ঠীর অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে যে অপরিসীম সংগ্রামের মহান ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল তার তুলনা হয় না। ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে কৃষক সমাজ নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।