আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের পটভূমি ব্যাখ্যা ক।

আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের পটভূমি

১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে ভয়ঙ্কর ও দুঃসহ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা বিরাজ করছিল। এ সময় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, শাসক শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব-বিরোধ, অপরিসীম দুর্নীতি, আমলাদের দৌরাত্ম্য, কেন্দ্র প্রদেশে বারবার সরকার পরিবর্তন এক ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিশেষকরে পূর্ব বাংলার মন্ত্রিসভার বারবার পরিবর্তন রাজনীতিতে এক অস্বস্তিকর অবস্থার জন্ম দেয়। ১৯৫৪-১৯৫৮ সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে সাতবার মন্ত্রিসভার রদবদল হয়। কেন্দ্রেও বেশ কয়েক বার সরকারের পরিবর্তন ঘটে। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ৯২ (ক) ধারা জারির মাধ্যমে শেরে বাংলা একে, ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বাতিল করা হয় ১৯৫৫ সালের ৩ জুন ৯২ (ক) ধারা প্রত্যাহার করা হয়। ৬ জুন আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে পূর্ববাংলায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। একই বছর কেন্দ্রেও সরকারের পরিবর্তন ঘটে। ১৯৫৫ সালের ৫ আগস্ট গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত হন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর ইসকান্দার মীর্জা। এ সময় কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর বিদায় এবং তার স্থলে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালের ৩০ আগস্ট খাদ্য সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ববাংলার আবু হোসেন সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পূর্ব

বাংলায় নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করে। একই সময় কেন্দ্রেও গভর্নর জেনারেল বাংকাদার মীর্জা এবং প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করলে সরকারের পতন ঘটে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ দিন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর গভর্নর জেনারেল ইসকান্দার মীর্জা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। মুসলিম লীগ নেতা আই চন্দ্রীগড় এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এদিকে পূর্ববাংলায়ও ১৯৫৮ সালের ৩০ মার্চ আতাউর রহমানকে পদচ্যুত করে

 

পুনরায় আবু হোসেন সরকারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন মালিক ফিরোজ খান নুন। এ সময় পূর্ববাংলার গভর্নর শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ক্ষমতাচ্যুত হন। নতুন অবস্থায়ী গভর্নর চিফ সেক্রেটারি ক্ষমতাসীন হয়েই পূর্ববাংলার আবু হোসেন সরকারকে পদচ্যুত করে। ১৯৫৮ সালের ২২ জুলাই পুনরায় আতাউর রহমান খান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এভাবে ঘন ঘন ক্ষমতার রদবদল এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের সুযোগ পায়। এ সময় পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদে আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদে পরস্পরবিরোধী এম এল এদের মধ্যে মারামারির মতো এক অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী গুরুতর আহত হয়ে পরবর্তীকালে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মীর্জা সামরিক আইন জারি করেন। মনে করা হয়, আইয়ুব খানের চাপেই ইসকান্দার মীর্জা সামরিক শাসন জারি করতে বাধ্য হয়।

 

প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মীর্জা সামরিক আইন জারি করে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হলো:

 

১. ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল।

 

২. কেন্দ্র ও প্রাদেশিক আইন পরিষদ ভেঙে দেয়া এবং মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত।

 

৩. রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।

৬. ব্যাংকে গচ্ছিত রাজনৈতিক দলসমূহের অর্থ আটক। মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া।

 

৫. এ সময় স্পিকার ছিলেন আবদুল হাকিম । তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

 

৪ . সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন।

 

 

৫. শেখ মুজিবসহ বেশ ক’জন রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার।