১৭৮৪ সালের পিট অ্যাক্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
ভূমিকা: রেগুলেটিং অ্যাক্ট আইনের মাধ্যমে বাংলা প্রদেশের শাসন ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্বপরিষদ গভর্নর জেনারেলের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এ সময় মুম্বাই ও মাদ্রাজ প্রদেশের গভর্নরদের বাংলার গভর্নরের অধিন্যস্ত করা হয়। গভর্নর জেনারেলের কার্যাবলি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কলকাতা সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলা, বোম্বে, মাদ্রাজ এ তিনটি প্রদেশের মধ্যে প্রায় বিরোধ লেগে থাকতো। রেগুলেটিং অ্যাক্টের মাধ্যমে এসব ত্রুটি দূর করার জন্য ইংল্যান্ডের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট ১৭৮৪ সালে যে আইন প্রণয়ন করে তাই পিট অ্যাক্ট নামে পরিচিত।
পিট অ্যাক্ট : ১৭৮৪ সালে ভারতীয় শাসনতান্ত্রিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্লামেন্টে একটি বিল স্থাপন করে এবং পিটের প্রচেষ্টায় এটি পার্লামেন্টে পাস হয়। এ আইনের নীতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রায় ৭৫ বছর ভারতের শাসন পরিচালিত হয়। নিম্নে পিট অ্যাক্টের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পিটের ভারতীয় আইনের ধারাসমূহ:
১. পিটের ভারত শাসন আইনে ৬জন কমিশনার নিয়ে একটি বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন করা হয়। এ পর্ষদে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী, রাষ্ট্রসচিব, এবং প্রিভি কাউন্সিলের ৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। রাজা বা রাণী নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সদস্যদের নিয়োগ বা পদচ্যুত করতে পারতেন। ভারতীয় প্রশাসন পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা পর্ষদকে প্রদান করা হয়।
৩. ভারতের বিভিন্ন অফিসে নিয়োগ প্রধানের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা ডিরেক্টর সভা ভোগ করতো তা বহাল রাখা হয়।
৪. ডিরেক্টর সভার যে কোন সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার যে ক্ষমতা এতদিন মালিক সভার হাতে ন্যস্ত ছিল, তার বিলোপ সাধন করা হয়। ফলে নিয়ন্ত্রণকারী পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন ডিরেক্টরগণ মালিক সভার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। ৫. পিটের ভারত শাসন আইনে বোর্ডের কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, অন্যান্য ব্যয় ভারতীয় রাজস্ব হতে নির্বাহের ব্যবস্থা করা হয়।
৬. পিটের ভারত শাসন আইনে সপরিষদ গভর্নর জেনারেলকে সকল প্রেসিডেন্সির কার্যকলাপ তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তার ফলে বাংলায় প্রেসিডেন্সি সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. এ আইন অনুযায়ী ডিরেক্টর সভার অনুমতি ব্যতিত সপরিষদ গভর্নর জেনারেল কোন যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে না।
অনুমতি সাপেক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। ৮. পিটের ভারতশাসন আইনে বলা হয় যে সকল কর্মচারি, অফিস আদালতে অনিয়ম, দুর্নীতি করবে তাদের ক্ষমা করা হবে না।
পিটের ভারতশাসন আইনের গুরুত্ব:
১১. পিটের ভারতশাসন আইনের ফলে কোম্পানির একচেটিয়া ক্ষমতা খর্ব হয়। বোর্ড অব কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণ পরিচালক সভা মেনে চলতে বাধ্য হয়।
২. গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় এবং শাসনব্যবস্থায় গতি দেখা যায়।
৩. পিটের ভারত শাসন আইনে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করার কথা বলা হয়। কোম্পানি যাতে বেপরোয়াভাবে কাজ না করে সে জন্য বোর্ড অব কন্ট্রোলারের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পিটের আইনের গুরুত্বও যেমন রয়েছে তেমনি আবার কিছু সমালোচনাও রয়েছে।
সমালোচনা :
১. পিটের ভারতীশাসন আইনের ফলে প্রশাসনিক জটিলতা ব্যাপকভাবে দেখা যায়।
২. বোর্ড অব কন্ট্রোল ও পরিচালক সভার দ্বৈত শাসনের কারণে ভারত সম্পর্কে দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ কমে যায়।
৩. অর্থমন্ত্রী ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন বলে ভিন্ন সময়ে বোর্ড অব কন্ট্রোলার সভায় যোগ দিতে পারতেন না। ফলে বোর্ডের সভাপতির ক্ষমতা অত্যধিক বেড়ে যায়।
৪. পিটের ভারত শাসন আইনে কোম্পানিকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয় কিন্তু তা অমান্য করে কর্নওয়ালিস টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পিটের ভারতশাসন আইনে সব ভারতীয়দের কল্যাণের জন্য যে ধারা দেয়া হয়েছিল, যদি এসব ধারা মেনে চলত তবে ভারতে আইনশৃঙ্খলা, শান্তি অব্যাহত থাকতো, ভারতের কল্যাণেই। মূলত পিটের আইন। যদি ভারতীয়দের কল্যাণার্থেই ছিল পিটের আইন তারপরও কতিপয় সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়।