হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল কেন?

হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল কেন?

 

 

ভূমিকা: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে অনেক চড়াই উত্তরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পিছনে সব থেকে বড় বাধা হিসেবে যেটি কাজ করেছিল তাহলো হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরোধিতা। হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিল।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় হিন্দুদের বিরোধিতার কারণ: নিম্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় হিন্দুদের বিরোধিতার কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পিছনে হিন্দুদের বিরোধিতার কারণ: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলারমুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেকটাই এগিয়ে যায়। কিন্তু কংগ্রেসের চাপে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে মুসলমানরা শিক্ষাসহ সকল সুযোগ ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। এতে মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হয়। বাংলায় একটি বড় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হোক এটি ছিল এ অঞ্চলের মুসলমানদের প্রাণের দাবি। মুসলমানদের দাবি পূরণ ও ক্ষতি পূরণের জন্য লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে ঢাকায় এসে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আশ্বাস দেন। একই সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত সরকারি ঘোষণায় প্রকাশ করা হয়। এসময় বিরোধী গোষ্ঠীর বিরোধিতার দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে। তারা মনে করে যে, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বাঙালি জাতি ও বাংলা সাহিত্য বিভক্ত হয়ে পড়বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন সংকুচিত হয়ে যাবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান কমে যাবে। এতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।হিন্দুরা এসময় শহরে শহরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এবং ভারত সচিব, ভারত সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করে। ডঃ সারবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বড় লাটের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পিছনে যুক্তি প্রদর্শন করে বলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন প্রয়োজন নেই। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার প্রয়োজন আছে এবং সেজন্য চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু পূর্ব বাংলার মুসলমানদের অধিকাংশ কৃষক; বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে তাদের কোন কাজে আসবে না। সবশেষে ২৮ মার্চ কলকাতায় এক বিরাট জনসভায় হিন্দু নেতাগণ দাবি করেন যে, যদি একান্তই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তা হবে শুধু আবাসিক। মুসলিম নেতৃবৃন্দ আঞ্চলিক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষপাতি ছিলেন।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষা যে কোন জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। যদি কোন জাতির শিক্ষাকে অনুন্নত করে রাখা যায় তবে সে জাতি সব দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবে। তাই বাংলার মুসলমানরা যেন কোনভাবে উন্নতি করতে না পারে সেজন্য হিন্দু-মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থাকে পিছিয়ে রাখার জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছিল।