ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে আলোচনা কর।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে আলোচনা কর।

 

ভূমিকা: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, অনেক চড়াই উতরাই বিশ্ববিদ বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয় দেশের এ শীর্ষ বিদ্যাপীঠটি। বাংলার মানুষের জ্ঞান

 

পিপাসা মেটাতে বাংলার রাজধানী ঢাকাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: নিম্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করা

হলো:বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পটভূমি: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব বাংলার জনগণের শিক্ষার

 

উন্নতির জন্য সরকার বিশেষ কোন ব্যবস্থা অলম্বন করে নি। পূর্ব বাংলায় অল্প কয়েকটি স্কুল ও কলেজ ছিল। সব স্কুল ও কলেজ রাজধানী কলকাতা ও এর উপকন্ঠে কেন্দ্রীভূত ছিল। বাংলার মানুষের উচ্চশিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গভঙ্গের ফলে যখন ঢাকা শহরকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠিত হয় তখন এ অঞ্চলের শিক্ষার উন্নতির ব্যবস্থা হয়। এ সময় পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নওয়াব সলিমুলাহ, নওয়াব আব্দুল লতিফসহ অনেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯০৬ সালে নওয়াব সলিমুলাহ ইংরেজ সরকারের নিকট এ নতুন প্রদেশে একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার বেমফিল্ড ফুলার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হলে পূর্ব বাংলা ও আসামের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়। এতে এ অঞ্চলের মুসলমানগণ ইংরেজ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন। এ সময় ঢাকার নেতৃস্থানীয় মুসলমানগণ তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মুসলমানদের শিক্ষার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বড় লাট বুঝতে পারেন যে, বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার ফলে মুসলমানদের খুব ক্ষতি হয়েছে। তাদের ক্ষতি পূরণের জন্য তিনি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত সরকারি ঘোষণায় প্রকাশ করা হয়।

 

প্রতিষ্ঠা: ইংরেজ সরকার যখন ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলো এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারি ঘোষণায় প্রকাশ করা হলো তখন হিন্দু সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিগণ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেন। বিরোধিতা সত্ত্বেও বড় লার্ট জানান যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান হবে। এর আঞ্চলিক গণ্ডি বাংলার নতুন গভর্নর কারমাইকেলের কার্যভার গ্রহণ করার পর নির্ধারিত হবে। এরপর ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতায় একটি বিরাট জনসভায় হিন্দু নেতাগণ দাবি করেন যে, যদি একান্তই ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তবে এটি শুধু আবাসিক হবে।

 

মুসলিম নেতৃবৃন্দ আঞ্চলিক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯১২ সালের ৪ এপ্রিল ভারত সরকার ঢাকায় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২৭ মে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন করে। রবার্ট নাথান, বার এট, ল. এ কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার নামানুসারে কমিটির নামকরণ করা হয় নাথান কমিশন। কমিশন ঢাকায় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, বিজ্ঞান, ইসলামিক বিষয়, আইন, প্রকৌশল, চিকিৎসা প্রভৃতি শিক্ষার ব্যবস্থা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বার্ষিক ২২,৯৮, ৭১৬ টাকা ব্যয় হবে।

 

নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আলী ও শামস-উল-ওলামা আবু নসর ওয়াহিদ নাথান কমিটির সদস্য ছিলেন। তারা ঢাকায় আঞ্চলিক ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। গভর্নমেন্টে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে বিলম্ব হয়। এরপর ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়।

 

১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি সম্পর্কে সুপারিশের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠিত হয়। মাইকেল সেডলার এর সভাপতি ছিলেন। এজন্য এটি সেডলার কমিশন নামে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও গঠনতন্ত্র সম্বন্ধে উপদেশ দেয়ার ক্ষমতাও সেডলার কমিশনকে দেয়া হয়। এ কমিশন ঢাকায় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে। সুপারিশ অনুযায়ী ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয় বিল কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভায় উত্থাপিত হয় এবং ১৯২০ সালে তা আইনে পরিণত হয়।এ আইনের বলে ঢাকায় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিপ জে. হার্টগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলার নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার কাজ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে ছাত্রদের আবাসের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট সলিমুলাহ মুসলিম হলের ভিত্তি স্থাপিত হয়। প্রথম  থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু শিক্ষক ও ছাত্রের সংখ্যা বেশি হয়। ক্রমশ মুসলিম ছাত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৭ ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি দের মন্ত্রিসভা মুসলিম হাইদেবর সংখ্যা বেশি হয়। ক্রমশ মুসলিমব্যবস্থা করে। তখন থেকে পিলিম জাবালের সশক্ষা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিছু সংখ্যক মেরলিজন্য বৃত্তি আর্থিক সাহাবাব বলয়টি স্থাপন ক্ষেত্রে মুসলমানরা অগ্রগতি লাভ করে। কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণসলিম শিক্ষক নিযুক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হওয়ার ফলে

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছিল বাংলার মানুষের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পূর্বে শিক্ষা উপনীত হতে পারি যে, একো বিশ্ববিবাংলার মুসলমানরা ছিল পিছিয়ে। কিন্তু এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সমস্যাটি আস্তে আস্তে দূরীভূত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এক সময় স্থান করে নেয় বিশ্বের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে। এক সময় এটি খ্যাতি শান্তরীভূত হতে থাকে।