হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিল সম্বন্ধে আলোচনা কর।

 

হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিল সম্বন্ধে আলোচনা কর।

 

ভূমিকা: পৃথিবীতে এমন অনেক মহামানব রয়েছে যারা আর্তমানবতার সেবায় এবং ইসলামের সেবায় নিজেদের সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের সব সম্পত্তি উৎসর্গ করে দিয়ে পরিচিত লাভ করেছেন দাতা হিসেলের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এসব মহামানবের কথা স্মরণ করলে যার নামটি সর্বপ্রথম বলতে হয় তিনি হলেন হাজী মুহাম্মদ মুহসিন। তিনি নিজের জীবনের শেষ সম্বলটুকুও দান করে দিয়েছেন মানবতার সেবায়। নিম্নে হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিল: হাজী মুহাম্মদ মুহসিন ছিলেন একজন মানব দরদী ও বড় মনের মানুষ। যার পরিচয় পাওয়া যায় হাজী মুহম্মদ মুহসিন তলবিল নামে। ১৮০৬ সালে ধর্মপ্রাণ হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তাঁর বিরাট সম্পত্তি উইল করে মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য। তাঁর এ দানকৃত সম্পত্তি দিয়ে একটি তহবিল গঠন করা হয়। তাঁর নামানুসারে এ তহবিলের নামকরণ করা হয় হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিল।

 

মুহলিন তহবিলের অপব্যবহার: ব্রিটিশ সরকার হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তহবিলের অপব্যবহারে করেছিল। সরকার এ তহবিলের সম্পত্তি আসল উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে অন্যভাবে ব্যবহার করেছিল। এটি তত্ত্বাবধানের জন্য দুজন মোতাওয়ালি ছিল। এ মোতাওয়ালিদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় ১৮১৭ সালে সরকার এ সম্পত্তি তত্ত্বাবোধানের ভার গ্রহণ করেন। সরকার একজন মোতাওয়ালির স্থান অধিকার করে এবং অন্য একজন মুতাওয়ালী মনোনীত করে। ১৮৩১ সালে তহবিলে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা ছিল। সরকার ইমাম বাড়া ও একজন মোতাওয়ালির জন্য ব্যয় বরাদ্দ করে অবশিষ্ট অর্থে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে। এর সুদ হতে যা আয় হতো তা শিক্ষা কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা করে। জনশিক্ষা সাধারণ সমিতি এ ফান্ডের টাকায় হুগলিতে একটি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব করে। কলেজ স্থাপনের কাজে ১,৪০,০০০ টাকা ব্যয় মঞ্জুর হয়। এর বার্ষিক ব্যয়ের জন্য ৫৪,০০০ টাকা বরাদ্দ হয়। হুগলি কলেজে ছাত্রদের নিকট থেকে বেতন নেয়া হতো। গরিব মুসলমান ছাত্রদের পক্ষে বেতন দেয়া কষ্টসাধ্য ছিল। এতে মুসলমানগণ মুহসিন তহবিল হতে কোন উপকার পায় নি। সরকার কর্তক মুহসিন তহবিলের অপব্যবহারে সমালোচনা করে হান্টার বলেন, “এ আত্মসাতের অভিযোগ সম্বন্ধে আলোচনা বড়ই কষ্টদায়ক। কারণ এ অভিযোগ অগ্রাহ্য করা অসম্ভব।”

 

মুহসিন তহবিল বাজেয়াপ্ত: ১৮৩৪ সালে সরকার এ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। এর কয়েক বছরের রাজস্বর আয় সরকারের তহবিলে জমা হয়।

১৮৪০ সালে সরকার এ ফান্ডের টাকা এবং দান সম্পত্তির বার্ষিক আয় একটি ইংরেজি বিদ্যালয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য বরাদ্দ করে। এ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র ও শিক্ষক হিন্দু ছিল। যদিও ভূসম্পত্তি মুসলমানদের শিক্ষার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। তবুও এ বিদ্যালয়ে দরিদ্র মুসলমান ছাত্ররা শিক্ষার ব্যাপারে কোন রূপ আর্থিক সুবিধা পায় নি।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় হাজী মুহাম্মদ মুহসিন যে উদ্দেশে তার সমুদয় সম্পদ দান করেছিলেন তার সে উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ সফল হয় নি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের কবলে এবং কিছুসংখ্যক স্বার্থান্বেসী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দূরভিসন্ধির ফলে তহবিলের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।