কলকাতা মাদ্রাসা সম্বন্ধে আলোচনা কর।

কলকাতা মাদ্রাসা সম্বন্ধে আলোচনা কর।

 

 

 

ভূমিকা: ইংরেজ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুখে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম জনতা তাদের শিক্ষার অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। আধুনিক শিক্ষা ও ইসলামি শিক্ষার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম জনতার প্রাণের দাবি। আর সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতা মাদ্রাসা।

 

কলকাতা মাদ্রাসা: নিম্নে কলকাতা মাদ্রাসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

১. কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা: ১৭৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কলকাতার শিক্ষিত ও বিশিষ্ট মুসলমানগণ কলকাতায় একটি মাদ্রাসা স্থাপনের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংসের নিকট আবেদন করেন। তাদের আবেদনক্রমে তিনি ১৭৮০ সালের অক্টোরব মাসে কলকাতা মাদ্রাসা স্থাপন করেন এবং আরবি ও ফারসি ভাষায় ব্যুৎপন্ন মজিদ উদ্দিনকে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেন।

 

২. ব্যয় নির্বাহ: প্রধান শিক্ষক মজিদ উদ্দিন প্রথম দিকে নিজ তহবিল হতে কলকাতার মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহ করতেন। ১৭৮১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি কাউন্সিলে প্রস্তাব করেন যে, মাদ্রাসার ব্যয়ভার সরকারের বহন করা উচিত। কাউন্সিল এ প্রস্তাবের সুপারিশ করে ডাইরেক্টর বোর্ডের নিকট পাঠান। ১৭৮২ সালের ৩ জুন কোম্পানির সরকার মাদ্রাসার ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য চব্বিশ পরগনা জেলার কয়েকটি গ্রামের রাজস্ব দান করেন। মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহের জন্য এ আয় অপ্রতুল হওয়ায় ১৭৮৫ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসের সুপারিশক্রমে সরকার অতিরিক্ত দানের ব্যবস্থা করে। এর ফলে মাদ্রাসার জন্য সরকারি সাহায্যের পরিমাণ বছরের ২,৯০,০০০ টাকা হয়।

 

৩. ছাত্র সংখ্যা: কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আবাসিক ছাত্র ছিল ৪০ জন। এছাড়াও ছিল কিছু অনাবাসিক ছাত্র। ১৮৩০ সালে ইংরেজি শিখেছিল এমন ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৮৭ জন ও ১৮৫০-৫১ শিক্ষাবর্ষে ছিল ৯০ জন।

 

 

কলকাতা মাদ্রাসায় প্রথম দিকে আরবি ও ফারসি পড়ানো হতো। পরবর্তীতে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ইংরেজি ক্লাস শুরু হয় ১৮২৯ সালে। ১৮৩৪ সালে আরবির সাথে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষার প্রতি ইংরেজ সরকারের ছিল চরম অবহেলা। ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি সরকারের ছিল চরম অবহেলা। মাদ্রাসার ছাত্রদের ইংরেজি শাখার প্রতি ছিল অনেক আগ্রহ। ইউড্রো বলেন, মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ছাত্রগণ যেটুকু উন্নতি করেছে তা তাদের আগ্রহ ও অধ্যবসায় এবং শিক্ষকের ধৈর্য ও পরিশ্রমের ফলে সম্ভব হয়েছে। মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষার অভাব ছিল। বিশেষ করে ইংরেজির জন্য একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি বর্ণমালা হতে শুরু করে গোল্ডস্মিথ, ওয়াটস, ইউক্লিড প্রভৃতি বিষয় পড়াতেন। ১৮৫৪ সালে কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয়। ইংরেজি-আরবি ক্লাসের স্থলে একটি ইংরেজি-ফারসি বিভাগ খোলা হয়। এছাড়াও উর্দু ও বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। নিম্নমান পর্যন্ত ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত না হলেও পর্যায়ক্রমে সময়ের ব্যবধানে উন্নত হতে থাকে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতীয় মুসলমানদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। তারা ইংরেজি জানতো না। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা কলেজসমূহে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতো না। ফলে তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়েছিল। কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুসলমানরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তারা ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ পায়।