ওয়ারেন হেস্টিংসকে স্বৈর শাসক বলা হয় কেন?

ওয়ারেন হেস্টিংসকে স্বৈর শাসক বলা হয় কেন?

 

 

ভূমিকা : কোম্পানির যখন সংকটময় অবস্থা, এমন সময় একজন দক্ষ গভর্নরের অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। এ সময় ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি কারো মতের প্রাধান্য দিতেন না তার মতকেই তিনি গ্রহণ করতেন। যাচাই বাচাই না করে ওয়ারেন হেস্টিংস উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতেন। দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি সব কিছু করতে পারতেন। তিনি নির্মম, নির্দয় প্রকৃতির ছিলেন, এমনকি তিনি অনেক বেশি একগুঁয়েমি প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। এজন্য তাকে মূলত স্বৈরতান্ত্রিক শাসক বলা হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংসহেতু কোম্পানির পূর্বেকার জোয়ার ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বাংলার মানুষের স্বার্থে আঘাত গভর্ণর হিসেবে নিম্নককে বড় করে দেখে এসব কারণে তাকে স্বৈর শাসক বলা হয়। নিম্নে স্বৈর শাসক বলার কতিপয় কারণ উলেখ করা হলো:

 

১.থের নিজের মতকে প্রাধান্য: ওয়ারেন হেস্টিংস কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কারো সাথে আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নিতেন মানিতোন সর্বদা নিজের মতকে প্রাধান্য দিতেন। একটা জটিল বিষয় যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো নিতেন না। পিারে তা তিনি বুঝতে চাইতেন না। যার জন্য তার সময় কালে সাধারণ মানুষ অনেক ভোগান্তির স্বীকার হয়। এজন্য তাকে স্বৈর শাসক বলা হয়।

 

২ তাপাচসালা বন্দোবস্ত চালু: ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচসালা বন্দোবস্ত চালু করেন। তিনি পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। যারা সর্বোচ্চ রাজস্ব দিতে রাজি হয় তাদের পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দেয়া হয়, যা পাঁচসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এ সময় ভণ্ড, প্রতারকরা বেশি রাজস্ব দেয়ার কথা বলে জমি ইজারা নেয় এবং কৃষকদের উপর ইজারা তুলতে সীমাহীন অত্যাচার করে। তার এ অদ্ভুত সিদ্ধান্তের জন্য তাকে স্বৈর শাসক না বলে উপায় নেই।

 

৩. কৃষি ধ্বংস: ব্রিটিশ শাসন আমলে কৃষি ছিল বাংলার প্রাণ। সে সময় ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের নামে কৃষকদের উপর অমানবিক নির্যাতন করাতো ইজারাদারদের দ্বারা, এমন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক কৃষক ঘর, বাড়ি, ছেড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যায়। কৃষি জমি পতিত পড়ে থাকে। কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয় এজন্য তাকে স্বৈর শাসক বলা হয়।

 

৪. পূর্বেকার জমিদারদের জমিদারি খর্ব: যারা দীর্ঘদিন যাবত জমিদারি করে আসছে, তারা জানে কিভাবে কৃষকদের দ্বারা অতিরিক্ত ফসল ফলানো যাবে এবং কিভাবে রাজস্ব আদায় করা যাবে। কিন্তু হেস্টিংস এসব অভিজ্ঞ জমিদারদেরকে জমিদারি থেকে বাতিল করে, অযোগ্য দালাল, ভণ্ডদেরকে যখন জমিদারি প্রদান করল তখন দেশে অরাজকতা দেখা যায়।এজন্য তাকে স্বৈরশাসক বলা হয়।

 

৫. স্বাধীন রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ: ওয়ারেন হেস্টিংস যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বাংলার বাইরে যেসব স্বাধীন রাজ্য ছিল তাদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ঐসব রাজ্যকে তিনি তার বসে নিয়ে আসেন। তার সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের অন্যতম প্রধান রাজশক্তিতে পরিণত হয়। এটা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিফলন। স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তার ফলেই তিনি অন্য রাজ্যগুলোকে তার বশে নিতে চেয়েছিল।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে যে কয়জন শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে বাংলা শাসন করে তাদের মধ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস অন্যতম। তিনি নিজ দেশ প্রেমিক ছিলেন, বাংলার মীরজাফরদের মতো বিশ্বাস ঘাতক নন। তার দেশের স্বার্থে তিনি বাংলার মানুষের উপর এ নির্মম অত্যাচার চালান। আমাদের কাছে অত্যাচারি নাম ওয়ারেন হেস্টিংস কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে দেশ প্রেমিক।