ইংরেজ কোম্পানির শিক্ষানীতি সম্বন্ধে বর্ণনা কর।
ইংরেজ কোম্পানি অষ্টাদশ শতকে শ্বরের বর্ণনা করাও করে। এ সময় কোম্পানি এ অন্ডালেরও নামে পারাণের শিক্ষার কথা ভেবে শিক্ষার উন্নয়নে ভারত বর্ষের পরিকল্পনা করে। যা ইংরেজ কোম্পানির শিক্ষানীতি পরিচিত।
ইংরেজ কোম্পানির শিক্ষানীতি : নিম্নে প্রশ্নালোকে ইংরেজ কোম্পানির শিক্ষানীতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো :
১. আরবি-ফারসি শিক্ষা: ইংরেজরা শাসন ক্ষমতা লাভ করার পূর্বে ভারতে মুসলমানরা শাসন করে। এ সময় এ অঞ্চলে আরবি-ফারসি শিক্ষার প্রচলন অধিক হারে প্রচলিত ছিলবার পূর্ব্বে ভারতো মুআরাব ফারসি শিক্ষার প্রতি তেমন মনোযোগ 1 দেয়নি। তবে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে আরবি ফারসি শিক্ষার উন্নয়নে কিছুটা চেষ্টা করে।
২. বাংলা ও সংস্কৃতি শিক্ষা: ইংরেজ সরকার বাংলা ও সংস্কৃত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। সরকার বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষার উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
৩. ইংরেজি শিক্ষা: কোম্পানির সরকার সবচেয়ে বেশি যত্নবান ছিল ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে। ইংরেজি শিক্ষার উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কোম্পানির সরকার। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য খ্রিস্টান মিশনারিগণ ভারতে ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজে উদ্যোগী হয়। ১৭৩১ সালে সোসাইটি ফরদি প্রমোশন অব দি খ্রিস্টান নলেজ নামক ধর্মপ্রচারকদের একটি দল কলকাতায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করে। এ বিদ্যালয়ে বিনা খরচে শিক্ষা দেয়া হতো। ১৭৫৮ সালে সুইডেনের ধর্মপ্রচারক জাকারিয়া কিয়ার নাস্তার কলকাতায় অন্য একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করে। মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজি চালু করেছিল সরকার যদিও তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের।
৪. বাংলা পাঠশালা প্রতিষ্ঠা: ইংরেজ সরকার বিভিন্ন জেলায় বাংলা পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করে। এডাম কয়েকটি জেলার পাঠশালার সংখ্যা দিয়েছেন। মেদিনীপুরে ৫৪৮টি, মুর্শিদাবাদে ৬২টি, বীরভূমে ৪০৭টি বর্ধমানে ৬২৯টি এবং দিনাজপুরে ১১৯টি পাঠশালা ছিল। এডাম এ সকল পাঠশালার পাঠ্যতালিকার উলেখ করে বলেছেন যে, ছাত্রদের প্রতিদিন সকালে হাটু গেড়ে নত মস্তকে সরস্বতি বন্দনা আবৃত্তি করতে হবে। তারা শুভঙ্করের গণিতের নিয়মগুলোও সমস্বরে আবৃত্তি করতো। তাঁদেরকে বাড়াকিয়া, গণ্ডাকিয়া, কাঠাকিয়া, শতকিয়া, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং কৃষি ও বাণিজ্য বিষয়ক হিসেবের নিয়মগুলো মুখস্ত করাতে হতো। পাঠ্যপুস্তকগুলো হিন্দুধর্ম ও উপকথা সম্বন্ধীয় ছিল। এজন্য মুসলমানগণ পাঠশালাগুলোতে শিক্ষালাভের সুযোগ গ্রহণ করতে উৎসাহ পেত না।
৫. মিশনারি পাঠশালা: খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য কোম্পানির সরকার মিশনারিদেরকে পাঠশালা স্থাপনে সহযোগিতা করে যা মিশনারি পাঠশালা হিসেবে পরিচিত। এ সকল প্রতিষ্ঠানে খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা দেয়া হতো। এডামের মতে, চব্বিশ পরগণা জেলায় ৩৬টি, যশোরে ৪টি, নদীয়া ১টি, বাকেরগঞ্জে ১টি, চট্টগ্রামে ২টি, ত্রিপুরাতে ১টি, রাজশাহীতে ১টি, দিনাজপুরে ১টি, মুর্শিদাবাদে ২টি ও বীরভূমে ২টি মিশনারি পাঠশালা ছিল।
৬. অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা: ১৮৩৬ সালে সরকার কলকাতায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন। এ কলেজে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। ১৮৩৮ সালে মেডিকেল সংশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৪৩ সালে হিন্দু কলেজে আইন ক্লাস আরম্ভ হয়। (সরকার ১৮৩৬ সালে মুহসিন ফান্ডের টাকায় হুগলি কলেজ স্থাপন করে। এ সময় কৃষ্ণনগর কলেজ এবং বর্ধমান, বাকুড়া, বারাসাত ও বগুড়ায় জিলা স্কুল স্থাপিত হয়। স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের উদ্যোগে কলকাতায় কয়েকটি কলেজ ও স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। মতিলাল শীল একটি অবৈতনিক কলেজ ও স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৫৩ সালে হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ স্থাপিত হয়। এছাড়াও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজ সরকারের শিক্ষানীতি বিশেষণ করলে দেখা যায় যে, ইংরেজ সরকার। ভারতবর্ষের জনগণের শিক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা চলিয়েছে। তবে তা ছিল বিশেষভাবে হিন্দুদের জন্য মুসলমানরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল।