ইংরেজি কোম্পানি ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালু করেছিল কেন?
ভূমিকা : ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে প্রায় দীর্ঘ দুই শতাব্দীকাল শাসনকার্য পরিচালনা করে। ব্রিটিশরা যেহেতু ইংরেজি ভাষাভাষী ছিল, তাই ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করা তাদের জন্য জরুরি ছিল। আর এ প্রয়োনীয়তা উপলব্ধি করে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালু করে ও তা দ্রুত উন্নয়নের চেষ্টা করে। মূলত ভারত বর্ষে ইংরেজি শিক্ষা প্রচলনের কতকগুলো কারণ ছিল। আর এ কারণগুলোই প্রশ্নের আলোচ্য বিষয়।
ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালুর কারণ: নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. খ্রিস্টধর্ম প্রচার: খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সুবিধার জন্য খ্রিস্টান মিশনারিগণ বাংলাদেশে ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজে মনোযোগী হন। ১৭৩১ সালে সোসাইটি ফর দ্যা প্রমোশন অব দ্যা খ্রিস্টান নলেজ (Society For the Promotion of the Christian Knowledge) নামক ধর্মপ্রচারকদের একটি দল কলকাতায় একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে। এ বিদ্যালয়ে বিনা খরচে শিক্ষা দেয়া হতো। ১৭৫৮ সালে সুইডেনের ধর্ম প্রচারক জাকারিয়া কিয়ারনান্ডার কলকাতায় অন্য একটি বিদ্যালয় শুরু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মিশনারিগণ কয়েকটি ইংরেজি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। মিশনারিগণ মনে করতেন যে, ইংরেজি জ্ঞানলাভ করলে হিন্দুরা মূর্তি পূজার অসারতা বুঝতে পারবে এবং তাদেরকে খ্রিস্ট ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করা যাবে।
২. ইংরেজি অফিসারদের সহযোগী সৃষ্টি: ইংরেজ অফিসাররা ভারতবর্ষের প্রচলিত আরবি, ফারসি, সংস্কৃতি বা বাংলা কোন ভাষাই জানতো না। কিন্তু আবার এ অঞ্চলের লোকজন ইংরেজি ভাষা জানতো না। কিন্তু ইংরেজ অফিসারদের সহযোগিতা করার জন্য ইংরেজি শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন ছিল। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করেন।
৩. পাশ্চাত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো: ব্রিটিশ সরকারের ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালু করার অন্যতম। লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো এবং তা সফল হয়েছে। হিন্দুরা তাদের সংস্কৃতি এবং মুসলমানরা তাদের সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে আস্তে আস্তে ইংরেজি সংস্কৃতি করায়ত্ত করেছে।
৪. অফিস আদালতের ভাষা ইংরেজি করা: ভারত বর্ষে অফিস আদালতের ভাষা ছিল আরবি ফার্সি সংস্কৃতি। কিভাবে এ সকল ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষাকে অফিস আদালতের ভাষায় রূপান্তর করা যায়, ইংরেজ সরকার সে পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং ইংরেজি ভাষাকে অফিস আদালতের ভাষা করার জন্য ইংরেজি শিক্ষ। চালু করে।
৫. কোম্পানির সুবিধা: কোম্পানি যেন সহজে ভারতবর্ষে তাদের ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে সেজন্য ইংরেজি শিক্ষা চালু করে। জনগণ ইংরেজি ভাষা শিখলে কোম্পানি সহজেই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এতে তারা ব্যবসায় বেশি লাভবান হবে।
৬. সরকারের সুবিধা: ইংরেজি ভাষা জানলে সরকারের ব্রিটিশ কর্মকর্তারা সহজেই সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। সেজন্য কোম্পানি সরকার ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালু করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। জনগণও ইংরেজি শিখতে আগ্রহী ছিল। তবে এক্ষেত্রে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুরা বেশি আগ্রহী ছিল। ফলে ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দুরা অনেক এগিয়ে যায়। আর মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ে। এতে হিন্দুদের সাথে সহজেই ইংরেজদের যোগাযোগ সহজ হয়ে পড়ে। ফলে হিন্দুদের সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক ভালো হয়।
৭. জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার: ইউরোপের অনেক লেখক ইংরেজি ভাষায় অনেক বই লিখেছেন। বিজ্ঞান শাস্ত্রের অনেক বই রয়েছে ইংরেজি ভাষায়। চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ের উপর অসংখ্য বই রয়েছে ইংরেজি ভাষায়। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ রয়েছে ইউরোপীয় পণ্ডিতদের যাদের লেখনী ফুটে উঠেছে ইংরেজি ভাষায়। এসব ইউরোপীয় জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হলে প্রয়োজন ছিল ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করা। তাই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকার ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতকে ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যেই ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা চালু করেছিল। এক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি সফল না হলেও অনেকটাই সফল হয়েছিল।