১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা (Education Dispatch, 1854) সম্বন্ধে বর্ণনা কর

১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা (Education Dispatch, 1854) সম্বন্ধে বর্ণনা কর

 

 

ভূমিকা: ১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা ভারতবর্ষে শিক্ষাবিস্তারে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানুগলো পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করা হয়। নিম্নে কোম্পানি সরকারের ১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।

 

১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা: ভারতের শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ১৮৫৪ সালের পরিকল্পনার (Education Dispatch, 1854) কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। প্রত্যেক প্রদেশে শিক্ষা বিভাগ গঠন, কলকাতা, মুম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যালয় শিক্ষকদের শিক্ষার জন্য নর্মাল স্কুলের ব্যবস্থা মধ্য ইংরজি বিদ্যালয় স্থাপন। শিক্ষার জন্য সরকারি সাহায্যে ব্যবস্থা এ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি এবং নিম্ন পর্যায়ের শিক্ষার জন্য বাংলা ভাষা মাধ্যম রূপে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে বলা হয়।

 

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: কোম্পানির সরকার ভারতবর্ষে ১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে সকল কাজ সম্পাদন করে তা হলো:

 

১৮৫৪ সালে হিন্দু কলেজ হতে এর স্কুল বিভাগ পৃথক করা হয় এবং এটিকে প্রেসিডেন্সি কলেজ নাম দেয়া হয়। স্কুল বিভাগ হিন্দু স্কুল নামে পরিচিত হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে সকল সম্প্রদায়ের ছাত্রদের প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এ কলেজে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রাচ্য সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

 

ক. শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবোধানের জন্য সরকার প্রত্যেক প্রদেশে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবোধানের জন্য সরকার জনশিক্ষা ডাইরেক্টর (Director of public instruction) নিয়োগ করা হয়।

খ. সরকারি কলেজগুলোতে আইন বিভাগ খোলা হয়।

 

গ. ১৮৫৮ সালে কলকাতায় প্রকৌশল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

ঘ. কলকাতা ও হুগলিতে নর্মাল স্কুল ও এদের সংশিষ্ট আদর্শ বিদ্যালয় খোলা হয়। নর্মাল স্কুলে সংস্কৃত সাহিত্য ও ব্যাকরণে জ্ঞান আবশ্যক ছিল। এজন্য সেখানে মুসলমান শিক্ষার্থীদের প্রবেশ দুঃসাধ্য ছিল।

 

৫. ১৮৫৭ সালে কলকাতা, মুম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনার ফলে ভারতবর্ষে শিক্ষার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এদেশর জনগণ খুব সহজেই পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের সংস্পর্শ লাভে সক্ষম হয়। ফলে ভারতবর্ষ জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করে। তবে এ উন্নতির ছোঁয়া লেগেছিল হিন্দু ছাত্রদের উপর। এ পরিকল্পনায় মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য কোন চিন্তা করা হয় নি।