মুখল শাসনব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব আলোচনা কর।

মুখল শাসনব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব আলোচনা কর।

 

 

ভূমিকা: প্রাচীন কাল থেকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। মুঘল রাগনামলে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মুঘল শাসকদের অধিকাংশ ইতিহাসে রাজনীতিয়ের ধর্মকে ব্যবহার করেন। তবে এদের মধো ব্যতিক্রম ছিলেন সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীর। সম্রাট আই তাদের আমিন বাবস্থানবিশেষে সকল ভারতীয়দের আনুগত্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রবর্তন করেমাট জবাবর জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল। ও মুঘল শাসনামলে ধর্মের প্রভাব: কেউ কেউ বলেন, মুঘল সম্রাটরা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বর্জন করে ধর্মনিরপেক্ষ

রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের ও বর্ণের সমানাধিকার স্বীকৃত হয়ে থাকে। কিন্তু সম্রাটদের

 

সকলেই যে এ নীতি গ্রহণ করেন তা কিন্তু ঠিক নয়। নিম্নে মুঘল শাসনে ধর্মের প্রভাব আলোচনা করা হলো:

১. গাজী উপাধি ও হিন্দুদের উপর আক্রমণ: মুঘল সম্রাটার মধ্যে বাবর ছিলেন গোঁড়া সুন্নি মুসলমান। তাঁর ধর্মনীতি মোটেই উদার ছিল না। তিনি নানা সংগ্রামের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করেন এবং ধর্মের স্বার্থে রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নিজ অনুচরবর্গকে উৎসাহিত করেন। রানা সংগ্রামের বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করার পর বাবর ‘গাজী’ (কাফেরদের নিধনকারী’) উপাধি গ্রহণ করেন। হিন্দুদের মন্দির বিনষ্ট করে এবং হিন্দু বণিকগণের উপর নানাবিধ শুল্ক ধার্য করে তিনি হিন্দুদের প্রতি আক্রমণ তথা আঘাত হানেন।

 

২. ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে অনাগ্রহ: হুমায়ুন বাবরের মতো অধিকমাত্রায় ধর্মান্ধ ছিলেন। তিনি ধর্মের ক্ষেত্রে সামান্যতম নমনীয় নীতি গ্রহণ করেন। তিনি সুন্নিদের মতো শিয়াদের অনুগ্রহ করতেন। কিন্তু তিনি হিন্দুদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেননি। তিনি বহুক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করতেন। তাঁর নির্দেশে কালিগঞ্জের হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়।

 

৩. উদার ধর্মনীতি: আকবর মুঘল শাসকদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তিনি রাষ্ট্রের উচ্চপদগুলোতে হিন্দুদের নিযুক্ত করে পক্ষপাতশূন্য বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতি অনুসরণ করেন। তিনি সকল ধর্মের মূলকথা নিয়ে একটি ধর্ম প্রবর্তন করেন, যার নাম ছিল ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’। আকবরের উদ্দেশ্য ছিল এবে একটি জাতীয় ধর্মে পরিণত করে সকল ধর্মের অসহিষ্ণুতা দূর করা। তিনি প্রত্যেক ধর্মের প্রতি উদারতা দেখান দ্বীন-ই-ইলাহী প্রচারের ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়। আকবর ধর্মীয় কোন প্রয়োজনের তাগিদে এরূপ নতুন ধর্মমত প্রচার করেন নি। এর মূলে ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। জাহাঙ্গীর ধর্ম ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে পিতার অনুসৃত উদার নীতি গ্রহণ করেন তাঁর রাজনৈতিক শক্তি বাবার মতো শক্তিশালী করতে।

৪. ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা: শাহজাহান পিতা ও পিতামহের মত পরধর্মের প্রতি উদার সহিষ্ণু মনোভাব দেখান নি। অবশ্য নীতিগতভাবে হিন্দুদের প্রতি নির্যাতনমূলক নীতিও গ্রহণ করেন নি। তাঁর আদেশে বারানসি ও মথুরার বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয় এবং বহু রাজপুতকে তিনি বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে উদার নীতি গ্রহণ করে উপর্যুক্ত হিন্দুদেরকে উচ্চপদে নিযুক্ত করতে কখনো কুণ্ঠিত হননি। সার্বিক অর্থে তাঁর সময় কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় ছিল।

৫. নির্যাতনমূলক নীতি: আওরঙ্গজেবের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল না। তিনিও ছিলেন গোঁড়া সুন্নি মুসলমান ও ধর্মান্ধ। তিনি হিন্দু ও শিয়াদের প্রতি নির্যাতনমূলক নীতি গ্রহণ করেন। তিনি নানাভাবে হিন্দু সমাজ ও ধর্মের উপর আঘাত হানেন। তাঁর সময় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিচ্যুতি ঘটে। তার ধর্মীয় নীতি ছিল এ এবং অসহিষ্ণু। তিনি রাজকার্য হতে হিন্দুদের বিতাড়িত করেন এবং তাঁদের পরিবর্তে মুসলমান কর্মচারী নিয়োগ করেন। তিনি বণিকদের উপর ৫% হারে শুল্ক হারে শুল্ক ধার্য করেন। এছাড়াও হিন্দুদের প্রতি আদায় করতেন। যেখানে মুসলমান ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে মাত্র জিজিয়া কর ধার্য করা হয়।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল সম্রাটরা শাসনকার্যের ক্ষেত্রে ধর্মকে প্রাধান্য দিতেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ ধর্মকে ব্যবহার করে তাঁরা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চেয়েছিলেন এবং সমগ্র ভারতবর্ষের সম্পূর্ণরূপে কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চেষ্টা করেছিলেন।