জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের পরিচয় দাও।

জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের পরিচয় দাও।

ভূমিকা : ইংরেজ কোম্পানি বহুবছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করেন। ভাততবর্ষ শাসনকালে ইংরেজ বণিকরা ভারতবর্ষ শাসনের জন্য বিভিন্ন সময় গভর্নর ও গভর্নর জেনারেলদের পাঠাতেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস। ভারতবর্ষ শাসনের ক্ষেত্রে তিনি সুদক্ষতার পরিচয় দেন।

জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস: ভারতবর্ষ শাসনে যেসব গভর্নর ও জেনারেল গভর্নর উলেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এক নাম বিশেষভাবে উলেখযোগ্য। নিম্নে তার পরিচয় দেওয়া হলো:

 

পরিচয়: জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন বাংলার গভর্নর। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। কোম্পানির শাসনের এক সংকটময় মুহূর্তে তিনি গভর্নর হয়ে বাংলায় আসেন। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ওয়ারেন হেস্টিংসের নীতি ছিল দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের দুই ব্যবস্থা করা এবং বিচারব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা। দ্বৈত-শাসনের ফলে যে অব্যবস্থা এবং অর্থাভাব দেখা দিয়েছিল তা দূর করা এবং বাণিজ্যের প্রসার সাধনও ছিল হেস্টিংসের অন্যতম উদ্দেশ্য।

 

শাসক হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস: ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন একজন দক্ষ শাসক। ভারতবর্ষে যখন কোম্পানি শাসন চরম সংকটে পড়েছিল ঠিক তখন কোম্পানি শাসনের হাল ধরেন। তিনি অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত-শাসন রহিত করেন। তিনি নবাবকে বাংলার শাসন দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেন এবং তাঁর জন্য বার্ষিক ১৬ লক্ষ টাকা ভাতার ব্যবস্থা করেন।তিনি প্রত্যেক জেলায় ইংরেজ কালেক্টর নিযুক্ত করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ হতে কলিকাতায় স্থানান্তরিত করেন।

 

যোদ্ধা হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস: যোদ্ধা হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংসের খ্যাতি ছিল। তিনি অযোধ্যার নবাবের সহিত মিত্রতা স্থাপন করিয়া হেস্টিংস রোহিলা যুদ্ধের সূত্রপাত করেন। এছাড়া তিনি সাফল্যের সাথে সকল বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। বাংলার শাসনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তিনি দ্বৈত শাসন রহিত করেন। এছাড়া তিনি নবাবকে বাংলার শাসন থেকে মুক্তি দেন। এর বিনিময়ে তিনি নবাবকে কিছু টাকা দেন। তিনি মারাঠাদের গৃহবিবাদ হস্তক্ষেপ করিয়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত করে। দেশীয় রাজ্যগুলির পারস্পরিক বিবাদে হস্তক্ষেপ করিয়া ইংরেজরা তাদেরকে ইংরেজদের সামরিক শক্তির উপর ক্রমেই নির্ভরশীল করিয়া তোলে। হেস্টিংসের কৃতিত্ব বিচার: হেস্টিংসের কার্যকলাপ ও কৃতিত্ব সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী মতামতের অন্ত নেই।হেস্টিংস বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে বাংলার সকল সমস্যা সমাধান করেন। তিনি বাংলার দুর্নীতিপরায়ণ কোম্পানির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তিনি প্রজাদের কাছ থেকে ন্যায্য খাজনা আদায় করেন। এর ফলে রাজ্যের সচ্ছলতা ফিরে আসে। তিনি প্রত্যেক জেলার ইংরেজ কালেক্টর নিয়োগ করে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি ইজারাদারি প্রথা প্রবর্তন করেন।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় নিযুক্ত গভর্নরদের মধ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস ছিল সবচেয়ে সফল। তিনি দেশেয় সকল সমস্যা সমাধান করে দেশে শান্তি ফিরে আনেন। তাই তিনি বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।