কাজির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

কাজির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

ভূমিকা: মুঘল শাসনব্যবস্থায় বিচারের ক্ষেত্রে কাজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুঘল আমলে প্রাদেশিক বিচারকদের উপাধি ছিল কাজি। কেন্দ্রীয় সদর-ই-সুদুর কর্তৃক ফৌজদারি মকদ্দমা বিচারের জন্য কাজিকে নিয়োগ করা হতো। কাজি-উল-কুজ্জাত ছিল কেন্দ্রীয় প্রধান বিচারক। তিনি কাজিকে ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এ নির্দেশনা অনুযায়ী কাজি সুনিয়ন্ত্রিতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন এবং যে কোন মামলার সঠিক রায় দিতে সচেষ্ট থাকতেন। কাজি তাঁর কার্যের জন্য কাজি-উল-কুজ্জাতের নিকট দায়ী থাকতেন।

 

কাজির ক্ষমতা ও কার্যাবলি কাজি প্রদেশের ফৌজদারি সংক্রান্ত সকল বিচারের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারকের ভূমিকা পালন করেন। কাজিকে সাহায্য করার জন্য মীরে আদল ও মুফতি নিয়োগ করা হতো। নিম্নে কাজির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:

 

১. ইসলামি আইন: কাজি প্রদেশের বিচারকার্যের জন্য ইসলামি আইনকে অনুসরণ করতে পারতেন। ইসলামি ‘শরিয়ৎ’ অনুসারে মুফতি প্রত্যেকটি আইনের ব্যাখ্যা করেন এবং ‘মীরে আদল’ আইন অনুযায়ী কি রায় হবে তা ঘোষণা করেন। আর কাজি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ইসলামি বিধি মোতাবেক রায় নিরূপণ করতেন।

 

২. ন্যায়বিচার: কাজি ন্যায়বিচারের স্বার্থে কেন্দ্রীয় প্রধান বিচারক কাজি উল-কুজ্জাত এর সাথে পরামর্শ করতেন। তিনি চুরি, ডাকাতি, হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ এবং প্রতারণাকারী ব্যক্তিদের মামলার রায় প্রদান করতেন। এসব অপরাধীদের তিনি প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন অপরাধে যুক্ত না হয় এবং জনগণের জীবন বিপন্ন ও সম্পত্তি নষ্ট না করে সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তিনি সতর্ক করে দিতেন।

 

• ৩. এতিমদের অভিভাবক: কাজি প্রদেশের পিতৃমাতৃহীন এতিম শিশুদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতেন। এতিম শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য তাদেরকে সকল সুযোগ সুবিধা দিতেন। যেমন- লেখাপড়া করতে পারে, সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ পরতে পারে, ভালো খাবার খায় এবং অসুস্থ থাকলে যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধা পায় ইত্যাদি। এতিম শিশুদের জন্য তিনি প্রদেশের অনেক জায়গায় ভালো এতিমখানা নির্মাণ করতেন।

 

৪. অভাবগ্রস্থদের সহায়তা: তিনি প্রদেশের সকল গরিব বা অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিদের খোঁজখবর রাখতেন। এসব ব্যক্তিদের অভাব দূর করার জন্য তিনি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেন। অভাব গ্রন্থ সক্ষম ব্যক্তিদেরকে তিনি প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজে নিয়োগ দিতেন। অক্ষম ব্যক্তিদেরকে তিনি নিজ দায়িত্বে রেখে দিতেন এবং সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

 

৫. সুপারিশ করা: কাজি সুপারিশ করতেন ধার্মিক, শিক্ষিত ও এতিম ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উনার ক্যাতে। তিনি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণের জন্য সাহায্য চাইতেন। এ ব্যাপারে তিনি সুবাদার ও সদরের সঙ্গে আলোচন করতেন।

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল আমলে কাজি বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হলেও তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতেন। তিনি এতিমদের অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।