মুঘল শাসনব্যবস্থায় নবাবদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

মুঘল শাসনব্যবস্থায় নবাবদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

 

ভূমিকা : নবাবি আমল বাংলার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল শাসনব্যবস্থা যখন একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিক এ সুযোগে বাংলার সুবাদার মুর্শিদকুলী খান নবাবি আমলের সূচনা করেন। এ শাসনকাল (১৭১৭-১৭৬৫) পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। নবাবি শাসনব্যবস্থা মুঘল শাসনব্যবস্থার অনুকরণেই গড়ে উঠে। নবাবরা উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলায় বংশগত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। নবাবগণ স্বীয় ক্ষমতা অনুযায়ী কর্মচারী নিযুক্ত করতেন এবং স্বাধীনভাবে প্রদেশ পরিচালনা করতেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে নবাবি শাসনের অবসান ঘটে।

নবাবদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি: নবাবগণ বাংলার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিল। এ সময় মুঘল সম কোন ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু নবাবগণ তাঁদের ক্ষমতাকে আইনগত করার জন্য সম্রাটদের ফরমান ও অনুমোদনের দুগালেঞ্জ ২৫ লক্ষ টাকা পাঠাতেন। নিম্নে নবাবদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:

 

১. উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগ: নবাবগণ শাসনব্যবস্থার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন। নবাব স্বয়ং সুবায় সন উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগ করতেন এবং সম্রাট নবাবের কার্য অনুমোদন করতেন। এদের মধ্যে দিউয়ান-ই-সবা বা সুবার সুবার রাজস্বের আয় ব্যয় দেখাশুনা করতেন। দিউয়ান-ই-তান কর্মচারী, সৈন্যদের বেতন ও ভাতা ইত্যাদির জন্য দায়ী নিয়োগ করেতেন। সৈন্য একজন প্রধান বকশী, নৌবহরের জন্য প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে মীর বহরকে নবাব নিয়োগ দিতেন।জন প্রধান বকশী, নৌবহরের জন্য প্রধানে উড়িষ্যা ও বিহার বাংলা সুবার অন্তর্ভুক্ত হয়। উড়িষ্যা ও বিহারকে বাংলার।

প্রদেশের মর্যাদা : নবাবদের হাজীবন গীতি অঞ্চলকেও প্রদেশের মর্যাদা দেয়া উড়িষ্যাব একজন মায়ের। দুইটি প্রদেশরূপে গণ্য করা হতো। জাহাঙ্গী দিওয়ান নিয়োগ করা হয়। অনুরূপভাবে বিহার ও জাহাঙ্গীরনগরের জন্য কে সুবাদার বা নায়েব নাজিম ও একজন নায়েব রাগেয়া ব্যবস্থা হয়। নবাব তাদের নিয়োগ দিতেন এবং সম্রাট নবাবের নিজের। একমন নায়েব নাজিম ও নায়েবে মিউনোয়েব দিউয়ান ছাড়াও আরো অনেক কর্মচারী প্রদেশে নিয়োগ করা হতো। এ জি প্রদেশের কর্মচারীগণ তাঁদের কাজের জন্য নবাবের নিকট দায়ী থাকেন।

 

৩. অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা: অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নবাবি শাসনব্যবস্থায় মুঘল আমলের মতো অনুররূণ কোতোয়াল নামক প্রধান পুলিশ কর্মচারী দায়িত্ব পালন করতো। কোতোয়াল সমস্ত প্রদেশে দস্যুবৃত্তি দমন, অপরাধীদের খুঁজে বের করে শান্তি প্রদান করতেন। এছাড়াও বাড়িঘরের তালিকা তৈরি, হাট-বাজারের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, আয়-ব্যয়ের হিসাব্যে তালিকা তৈরি ও বেওয়ারিশ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণর কাজে লিপ্ত থাকতেন। প্রদেশের কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ওয়াকিয়ানবিক। (সংবাদ প্রেরণকারী) তার কাছে সংবাদ পাঠাতেন। কোতোয়াল এ বিশৃঙ্খলা দূর করার দ্রুত পদক্ষেপ নিত। প্রদেশের শৃঙ্খল রক্ষার্থে গুপ্তচর নিয়োগ করা হতো। এরা গোপনীয়ভাবে অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন। জানুস ও হরকরাগণ কর্মচারীদের আচরণ, অন্যান্য লোকের গতিবিধি ও কার্যকলাপের বিষয়ে গোপনে নবাবের গোচরীভূত করতেন।

 

৪. দারোগা-ই-হরকরা: নবাবের একটি গোয়েন্দা বিভাগ ছিল। গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাকে বলা হয় দারোগা-ই-হরকরা। তিনি নবাব কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। তিনি প্রদেশের গোপন খবরগুলো তাঁর কর্মচারীর মাধ্যমে শুনতেন এবং এ খবরগুলো নবাবের কানে পৌঁছে দিতেন।

 

৫. রাজস্বনীতি: নবাবগণ বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় মুঘল কেন্দ্রীয় দিউয়ান টোডরমলের ‘যাবতি’ নীতির উপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি গড়ে তোলেন। তাঁরা জমির রাজস্ব আদায়ের জন্য নতুন ইজারাদার নিযুক্ত করতেন। জমিদার নামেমাত্র রইলেন, কিন্তু তাঁদের রাজস্ব আদায়ের ভার পড়ে রইল ইজারাদারদের উপর। সংগৃহীত রাজস্বের এক অংশ তারা পেতেন। বিলাসী জমিদারগণ নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করতে পারতেন না। ফলে তাদের জমিদারি থেকে উৎখাত করা হতো।

 

৬. নতুন ইজারাদার নিয়োগ: ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে ‘জমা’ নামক নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। যেসব জমিদার এ ব্যবস্থা মেনে নেন তাদেরকে স্ব-স্ব জমিদারিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। কিন্তু নতুন রাজস্ব ব্যবস্থাকে কিছু কিছু প্রাচীন জমিদার মানতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে এসব জমিদারকে উৎখাত করা হয় এবং এদের পরিবর্তে ইজারাদারদের সেই পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নবাবরা হিন্দুদের মধ্য থেকে বেশিরভাগ ইজারাদার নিয়োগ দিতেন।

 

৭. শাসনকার্যে হিন্দুদের নিয়োগ: নবাবগণ শাসনব্যবস্থা সুশৃঙ্খল রাখতে শিক্ষিত বাঙালি হিন্দুদের রাষ্ট্রের উচ্চপদগুলোতে নিয়োগ দেন। হিন্দুদের অধিকতর উন্নতি ও পদমর্যাদা প্রদান করা হতো। এদের অনেকেই বৃহৎ জমিদার। বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। রাজস্ব বিভাগের বিভিন্ন পদগুলোতে হিন্দুদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।

 

বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে প্রদেশকে নিরাপদ রাখা: বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে প্রদেশকে রক্ষার জন্য গোলদার। বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান ছিলেনণ থেকে একেএছাড়া ও মীর-ই-বাহার তারা নৌশক্তি বা নৌ সৈন্য দ্বারা বহিঃশত্রুর হাত থেকে প্রদেশকে মুক্ত রাখতেন।

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, নবাবরা মুঘল যুগে বাংলায় তাঁদের প্রদেশেরতাগুলো নবাবি প্রদেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতেন। তাঁদের সময় রাজিব ব্যকরেন সুমিতারা অবোলকতার অবসান, বিশ্যাণকামী কার্যকলালেন। তাঁরা যোগ্য শাসকে পরিণত হয়েছিলেন।