মিশনারি পাঠশালা সম্পর্কে ধারণা দাও।

মিশনারি পাঠশালা সম্পর্কে ধারণা দাও।

ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা প্রায় দুই শতক ধরে শাসনকার্য পরিচালনা করে। এ সময় তারা বাংলা দেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষার পাশাপাশি খ্রিস্ট ধর্মের উন্নয়ন ঘটাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এগুলোর মধ্যে মিশনারি পাঠশালা অন্যতম।

 

মিশনারি পাঠশালা: নিম্নে প্রশ্নালোকে মিশনারি পাঠশালা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

১. পরিচিতি: খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সুবিধার জন্য খ্রিস্টান মিশনারিগণ বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাই তারা কতকগুলো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলোই মিশনারি পাঠশালা হিসেবে পরিচিত।

২. পাঠশালা প্রতিষ্ঠা: বাংলা, আসাম ও কলকাতায় খ্রিস্টান মিশনারিগণ যে সকল পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেছেন তা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো:

 

৩. উইলিয়াম কেরী : ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরী নামক একজন খ্রিস্টধর্মপ্রচারক বাংলাদেশে আসেন। ১৯৯৪ সালে তিনি মালদহ জেলার সদন হাটি নীলকুঠিতে একটি পাঠশালায় শুরু করেন।

 

৪. ‘ইলাটনের পাঠশালা স্থাপন: উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইলাটন নামক একজন নীলকর মালদহ জেলায়। কয়েকটি পাঠশালা স্থাপন করেন এবং ছাত্রদের জন্য বাংলা ভাষায় কয়েকটি পাঠ্যবই লিখেন।

 

 

 

 

 

৭.পিয়ারসনের পাঠশালা : মে এর মৃত্যুর পর তিনি হার্লি চন্দরনগর ও কালনা অঞ্চলে পিয়ারসন তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাঠশালাগুলো তত্ত্বাবধানের কাজ গ্রহণ কয়েকটি পাঠশালা স্থাপন করেন। পাঠশালা স্থাপিত হয়। ১৮১৮ সালের মধ্যে বর্ধমান ১০টি মিশনারি পাঠশালা স্থাপন করেন।

৮. কলকাতায় মিশনারি পাঠশালা: কোম্পানি শাসনের আরম্ভ হতে কলকাতা একটি উলেখযোগ্য শিক্ষাকেন্দ্রে উন্নীত হয়। বেপটিস্ট স্থাপন করেন। মিশনারি সোসাইটি এবং চার্চ মিশনারি এসোসিয়েশন কলকাতা ও এর উপকণ্ঠে অনেকগুলো পাঠশালা । তাদের উদ্যোগে ১৮১৭ সালে কলকাতা স্কুল বুক। উদ্দ্যোগে কলকাতা স্কুল সোসাইট প্রতিষ্ঠিত হয় বাক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ সালে কলকাতা স্কুল বুঝে স্থাপন করা কলকাতা স্কুল সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল। ১৮২১ সাঠেশালাগুলোর উন্নতির ব্যবস্থা করা এবং নতুন বিদ্যালয় মিশনারি সোসাইটির সহযোগিতায় মিসবুক কয়েকটি বালিকা মিশনারি পাঠশালা স্থাপন করেনা দুই বছরে কলকাতা ও এর উপকণ্ঠে ২২টি মিশনারি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

 

৯শ্রীরামপুর মিশনারিদের পাঠশালা: ১৮২৪ সালে শ্রীরামপুর মিশনারিদের চেষ্টায় বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া, কৃষ্ণনগর ও অন্যান্য স্থায়ী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তারা ঢাকায় কয়েকটি পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২৩ সালে ঢাকা ও এর উপকণ্ঠে পাঠশালাগুলোর তত্ত্বাবধানের জন্য একটি বেসরকারি সোসাইটি গঠিত হয়। ১৮২৬ সালে এর তত্ত্বাবধানে ২৫টি বিদ্যালয় ছিল।

 

১০. পাঠশালায় ব্যয় নির্বাহ: উইলিয়াম কেরী, ইলার্টন ও মে যেসকল পাঠশালা স্থাপন করেছেন সেগুলোর জন্য ১৮১৫ সালে লর্ড হেস্টিংস মাসিক ৬০০ টাকা সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। ‘কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির’ জন্য সরকার ১৮২১ সালে এককালীন ৭০০০ টাকা দান করেন এবং মাসিক ৫০০ টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। এ সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল সস্তা দামে বই প্রকাশ করে পাঠশালাগুলোতে তা সরবরাহ করা। ১৮২৩ সালে সরকার কলকাতা স্কুল সোসাইটির জন্য মাসিক ৫০০ টাক বরাদ্ধের ব্যবস্থা করেন। এর কাজ ছিল বালিকার মিশনারি পাঠশালাগুলোর তত্ত্বাবধান করা। এ সকল অর্থ দিয়ে পাঠশালাগুলোর ব্যয় নির্বাহ করতেন।

 

১১. পাঠশালায় ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা: উইলিয়াম কেরী, ইলর্টিন ও মে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাঠশালাসমূহে ১৮১৮ সালে ৩,০০০ ছাত্র ছিল। স্টুয়ার্টের প্রতিষ্ঠিত পাঠশালাসমূহে ছাত্রসংখ্যা ছিল ১০০০ জন। ‘কলকাতা স্কুল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে শ্রীরামপুর মিশনারি কর্তৃক ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত পাঠশালাসমূহে ১৪১৪ জন ছাত্র ছিল। এডামের তদন্ত অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ৩৮টি মিশনারি বালিকা পাঠশালাসমূহে ২৪৯ জন ছাত্রী ছিল।

 

১২. এডামের তদন্ত প্রতিবেদন: এডাম বিভিন্ন জেলায় তদন্ত করে বাংলায় মিশনারি পাঠশালাসমূহের যে সংখ্যা দিয়েছেন তা হলো চব্বিশ পরগণায় ৩৬টি, যশোরে ৪টি, নদীয়া ১টি, বাকেরগঞ্জ ১টি, চট্টগ্রামে ২টি, ত্রিপুরায় ১টি, রাজশাহী ১টি, দিনাজপুর ১টি, মুর্শিদাবাদ ২টি পাঠশালা ছিল।মিশনারি পাঠশালাসমূহে খ্রিস্টধর্মীয় বই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য অঙ্গ ছিল। তাই মুসলিম ছাত্ররা এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় নি। মূলত মিশনারি পাঠশালাসমূহের প্রধানসমূহের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটানো।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার উৎপল ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, খ্রিস্টান মিশনারিরা বাংলা ও কলকাতাসহ যে সকল স্থানে মিশনারি পাঠশালা স্থাপন করছেন তার পিছনে রয়েছে নানামুখী উদ্দেশ্য। এ সকল অঞ্চলের মানুষ যেন পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে এবং খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে জানতে পারে। অতঃপর তারা যেন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। এভাবে খ্রিস্টধর্মের বিস্তৃতি ঘটে। এটাই ছিল পাঠশালাগুলো প্রতিষ্ঠার পিছনে মূল উদ্দেশ্য।