কেন্দ্রীয় দিউয়ান শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

কেন্দ্রীয় দিউয়ান শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

কেন্দ্রীয় দিউয়ানের শাসনব্যবস্থা : কেন্দ্রীয় দিউয়ান রাজস্ব সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান করতেন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা মকদ্দমা তিনি নিষ্পন্ন করতেন। নিম্নে কেন্দ্রীয় দিয়ে সংরশাসনকাল সমালোচনা করা হলো

১. প্রদেশের উপর ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় দিউয়ানের পরামর্শে সকল প্রদেশে প্রাদেশিক দিউয়ান নিযুক্ত করা হতো। প্রধান নিউয়ান প্রাদেশিক দিউয়ানের কার্যাবলি তত্ত্বাবধান করতেন এবং আদেশ নির্দেশ প্রদান করতেন। এ আদেশ নির্দেশ প্রাদেশিক দিউয়ানগণ পালন করতে সচেষ্ট থাকতেন। তাঁদের রাজয়ের ক্ষেত্রে আয় ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ এবং রাজস্ব ব্যাবস্থার সুবন্দোবস্ত করা তাঁর দায়িত্ব ছিল।

 

২. অর্থবিষয়ক ক্ষমতা : দিউয়ান অর্থবিষয়ক সকল প্রকার ক্ষমতার অধিকারী। কারণ তিনি শুধু রাজস্ব নয়, ভূমি সংক্রান্ত সকল বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী। তিনি অর্থনৈতিক সকল প্রকার বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি রাজকোষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুনিয়ন্ত্রিত রাজস্ব পদ্ধতির ব্যবস্থা করেন। তিনি অর্থব্যবস্থাকে ভালো অবস্থায় রাখতে রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করেন।

 

৩. নির্ভরশীলতা : দিউয়ান অর্থসংক্রান্ত সকল বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ফলে সম্রাটকে কোন কাজে অর্থদান ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হলে কেন্দ্রীয় দিউয়ানের উপর নির্ভর করতে হতো। সম্রাট কেন্দ্রীয় দিউয়ানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সকল প্রকার অর্থ ব্যয় করতেন।

 

৪. রাজকোষাগার পূর্ণ করা: প্রাদেশিক দিউয়ানরা তাঁদের প্রদেশ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় দিউয়ানের নিকট পাঠান। কেন্দ্রীয় দিউয়ানের নিকট পাঠালে তিনি এসব রাজস্ব রাজকোষাগারে রাখতেন। এভাবে সকল প্রদেশের রাজস্ব সঠিক সময়ে জমা করা হলে রাজকোষাগার পরিপূর্ণ থাকতো।

 

৫. রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান: রাজস্ব সংগ্রহ করার সময় রাজস্ব কর্মচারী প্রচণ্ড বেগ পেতে হতো। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিলাসী জমিদারগণ এবং গরিব প্রজা রাজস্ব পরিশোধ করতো না। এতে রাজস্ব কর্মচারীরা বার বার রাজস্ব চেয়েও ব্যর্থ হতেন। ফলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে জমিদার ও প্রজাদের উপর নির্যাতন শুরু করতেন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দিউয়ান যথেষ্ট চেষ্টা করতেন এবং জনগণকে রাজস্ব দিতে উৎসাহিত করেন।

 

৬. রাজস্ব নির্ধারণ: জমির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে জমিকে চার ভাগে ভাগ করা হতো। এগুলো হলো পোলাজ,পরাউতি, চর ও বনাঞ্চল এ চার প্রকার চাষের জমিগুলোতে উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা হতো। যা ছিল উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের এক অংশ রাজস্ব। ৭. অন্যায় কর বিলোপ: বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি সময়ে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যায়। ফলে সবকিছু বিবেচনা করে এ সময় কর মওকুফ করা হতো।

 

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় দিউয়ান একটি সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত গাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি রাজস্ব বিভাগের দ্বারা অর্থনৈতিক বুনিয়াদিকে শক্তিশালী করেছেন। এর ফলে রাজকোষের আয় বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠে।