মুঘল আমলের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা কর।

মুঘল আমলের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা কর।

 

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে মুখরীতিনীতি স্বাধীনতা প্রদান ছাড়াও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সাহায্য প্রদান করতেন। তাঁরা বিভিন্ন রাষ্ট্র, জাতি এবং ধর্মাবলী সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে ও সংমিশ্রণে এবং তাদের সহযোগিতা ও সমর্থনের উপর শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন।

 

মুঘল আমলের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা: মুঘল আমলের সম্রাটরা তাঁদের শাসনব্যবস্থায় সকল জনসনছে সমান এ সম্রাটদের অন্যতম ছিলেন মহামতি নিম্নে শাসনব্যবস্থা আলোচনা করা হলো:

 

মুঘল শাসকদের কেন্দ্রীয় পর্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিল সম্রাট। তিনি ছিলেন আইনের উৎস এবং তিনিই ছিলেন। সম্রাট কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্তুনি রাষ্ট্রের পরিচালক ছিলেন এবং যা ইচ্ছা পোষণ করতেন তাই পালন করছে ছিলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত। তিনি লনে বাধ্য থাকিত। তাঁর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রের যে কোন বিষয়ে কেউ কথা বলছে পারতো না। কেন্দ্র ও প্রদেশের সকল কর্মচারীকে সম্রাট নিয়োগ প্রদান করতেন।

 

২. উকিল: সম্রাটের পরে উকিল তথা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ কিংবা পদস্থাঞ্জি। ক্ষমতা তাঁর হাতেই ন্যস্ত ছিল। তিনি সম্রাটের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন।

 

৩. আইন কানুন: তাদের শাসনব্যবস্থায় কোন প্রকার লিখিত আইনকানুন প্রচলিত ছিল না। কোরআনের নির্দেশ ও ইসলামি রীতিনীতির উপর নির্ভর করে বিচারকার্য সম্পাদন করা হতো। জাহাঙ্গীর কর্তৃক প্রবর্তিত বারোটি আইন এবং আওরঙ্গজেবের আমলে রচিত ‘ফতোয়া-ই-আলমগীরী’ নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম আইনকানুন লিপিবদ্ধ হয়।

 

৪. দণ্ডবিধি: লঘু অপরাধের জন্য বেত্রাঘাত প্রদান করা হতো। অনেক সময় বেত্রাঘাত ছাড়াও অর্থদণ্ড এবং কারাদণ্ডের বিধান ছিল। রাজদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হতো। মৃত্যুদণ্ড প্রদানের একমাত্র অধিকারী ছিলেন। সম্রাট।

 

৫. দিউয়ান: রাজস্ব বিভাগের প্রধান ছিলেন দিউয়ান। তিনি অর্থনৈতিক বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ, রাজকোষ রক্ষণাবেক্ষণ ও হিসাব পরীক্ষা, রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতেন। কেন্দ্রীয় প্রধান দিউয়ান প্রাদেশিক দিউয়ানের কাজের তত্ত্বাবধান করতেন এবং তাকে আদেশ নির্দেশ দিতেন। তিনি সম্রাটের নিকট দায়ী থাকতেন।

 

৬. কাজি-উল-কুজ্জাত: বিচার বিভাগের সর্বপ্রধান ছিলেন কাজি উল-কুজ্জাত। সমগ্র দেশের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, বেতন ভাতাদি তিনি প্রদান করতেন। কাজিদের সহযোগিতায় সমগ্র দেশে সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করার চেষ্টা করতেন।

৭. খান-ই-সামান: তিনি ছিলেন সম্রাটের গৃহবিভাগের কর্মচারী। রাজপরিবারের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, খাদ্য সরবরাহ যুদ্ধাভিযানে সঙ্গী হওয়া, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ তাঁর দায়িত্বে ছিল। রাজ প্রাসাদের আয়-ব্যয় হিসাব ও কর্মচারীদের তত্ত্বাবধায়ক তিনিই ছিলেন।

 

৮. সদর-ই-সুদুর: ধর্ম, দাত্য প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন সদর-ই-সুদুর। প্রথমদিকে তিনি আইন ও আদালত বিভাগের কর্মচারীদের প্রধান ছিলেন। ১৮৫১ সালে আকবর সদর-ই সুদুর পদটি বিলুপ্ত করেন।

 

৯. কোতোমাল: শহরে শান্তি রক্ষার ভার এবং আধুনিককালের পুলিশের মতো দায়িত্ব পালন করতেন কোতোয়াল।। তাঁর দায়িত্ব ছিল অপরাধীদের খুঁজে বের করা ও শাস্তি প্রদান করা। এছাড়াও শহরের বাড়িঘরের তালিকা রক্ষা করা, হাট বাজারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, পাহারা দেওয়া, চুরি-ডাকাতি বন্ধ করা, সতীদাহ প্রথা নিবারণ করা, বেওয়ারিশ সম্পরি রক্ষণাবেক্ষণ করা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতো। তাঁদের অন্যতম একটি দায়িত্ব ছিল রাত্রিতে শহর এলাকায় পাছায়া। দেওয়া। তিনি কখনো ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতেন।

 

উপসংহার: উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করে পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল শাসন ব্যবস্থা ভারতবর্ষে ইতিহাসে স্বর্ণযুগ শাসনকাল হিসেবে মুখবং তাদের শান্তি ও কল্যাণের কথা চিন্তা করা হতো। তাদের পরিচালিত শাসনব্যবস্থা নিঃসন্দেহে ভালো ছিল বাগা মুঘল আমল নয়, তা পরবর্তী শাসনকালকে প্রভাবিত করেছিল।