জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারব্যবস্থা বর্ণনা কর।

জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারব্যবস্থা বর্ণনা কর।

 

ভূমিকা: ইংরেজ কোম্পানির শাসনকালে ইংরেজ গভর্নর ও গভর্নর-জেনারেলদের মধ্যে যারা ভারতে বিভিন্ন সংস্কার প্রবর্তন করেছিলেন। তাদের মধ্যে সর্বাধিক উলেখ্যযোগ্য হলো ওয়ারেন হেস্টিংস। তাঁর বিচারব্যবস্থা ছিল উন্নত ও সে সময়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাই তার বিচারব্যবস্থা ছিল অতুলনীয়। জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারব্যবস্থা: নিম্নে জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারব্যবস্থা উলেখ করা হলো:

 

১. বাণিজ্য বিভাগ হতে শাসনবিভাগকে বিচ্ছিন্নকরণ: মুঘলদের সময় হইতে ভারতে বিচারব্যবস্থার সাথে রাজস্বব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। রাজস্বব্যবস্থার ন্যায় বিচারব্যস্থায় বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে এবং ইহায় ফলে একটি সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থাগরিয়া উঠে। পুরাতন বিচারব্যবস্থায় নানারূপ দুর্নীতি প্রবেশ করে। হেস্টিংস স্থানীয় আইনকানুন বিলুপ্তি করিয়া তার স্থলে ইউরোপীয় আইনকানুন প্রবর্তন করেন নি। তিনি বিচারব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বাণিজ্য বিভাগ হতে বিচারব্যবস্থা পৃথক করেন

 

৩. কালেক্টর নিয়োগ: হেস্টিংস বিচারব্যবস্থায় দক্ষ কালেক্টর নিয়োগ করেন। এসব কালেক্টর স্থানীয় দেওয়ানি আদালত পরিচালনা করেন। এর ফলে স্থানীয় আদালতে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পায়।

৪. দক্ষ কাজি নিয়োগ : ওয়ারেন হেস্টিংস রাজ্য পরিচালনার জন্য দক্ষ কাজি নিয়োগ দেন। তিনি বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তনের জন্য কাজি নিয়োগ করেন। তিনি নীতিপরায়ণ কাজি যারা বিচারকার্য পরিচালনা করেন। এর ফলে বিচারব্যবস্থায় এক আমূল পরিবর্তন আসে।

 

৫. সদর নিজামত ও সদর দেওয়ানি আদালত স্থাপন : তিনি কলিকাতার সদর দেওয়ানি আদালত ও সদর নিজামত আদালত নামে দুইটি প্রথক বিচারালয় স্থাপন করেন। এ বিচারালয়-দুটি যথাক্রমে মফস্বল দেওয়ানি আদালত ও মফস্বল ফৌজদারি আদালত হইতে প্রেরিত আপিলগুলোর মীমাংসা করতো। গভর্নর ও তাহার কাউন্সিলের দুইজন সদস্যকে নিয়ে সদর নিজামত আদালত গঠিত ছিল এবং সদর নিজামত আদালতের প্রধান বিচারপতি নবাব কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। এ বিচারালয়ের প্রতি ইংরেজ বিচারকের পরিদর্শনের অধিকার ছিল।

 

৬. ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় বিলুপ্তি: ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয় এবং ফৌজদারদের ক্ষমতাগুলো জেলা-আদালতের বিচারকদের হস্তে ন্যস্ত করেন।

 

৭. কেন্দ্রীভূত শাসন স্থাপনের প্রচেষ্টা: তিনি কেন্দ্রীভূত শাসন স্থাপনের চেষ্টা চালান। তিনি উচ্চ বিচারালয়গুলো কলিকাতায় স্থাপন করে এবং দেওয়ানি কোষাগার মুর্শিদাবাদ হতে কলিকাতায় স্থানান্তরিত করে হেস্টিংস কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেন।

 

৮. বিচারকার্য উন্নয়নের জন্য বিধিব্যবস্থা: হেস্টিংস বিচারকার্য উন্নয়নের জন্য কতকগুলো বিধিব্যবস্থার প্রয়োগ করেন। বিচারকার্য উন্নয়নের অন্যতম বিধিব্যবস্থা হলো আর্থিক বিধিব্যবস্থা। কারণ অর্থ ব্যতীত বিচারকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এজন্য তিনি বিচারের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনয়ন করেন। তাই বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে তার পদক্ষেপ সফল হয়েছিল। বিচারব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি পর্যাপ্ত অর্থের ব্যবস্থা করেন।