চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর কেমন প্রভাব পড়ে?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর কেমন প্রভাব পড়ে?

ভূমিকা: রাজস্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করেই মূলত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন হয়েছিল। তাই রাজস্বকেন্দ্রিক এ ব্যবস্থার প্রথম সম্পর্ক নির্ণয় করা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও জমিদারদের সাথে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর প্রভাব: নিম্নে কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর প্রভাব আলোচনা করা হলো:

 

১ . কোম্পানির আর্থিক উন্নতি: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী হওয়ার পূর্বে কোম্পানিকে রাজস্ব নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়েছিল। আর এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে অর্থেরও অপচয় হয়েছিল। তাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী হওয়ায় কোম্পানি এ অপচয়/আর্থিক অপচয় থেকে মুক্তি পায়।

২. কোম্পানির বাজেট প্রণয়ন: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে বিচার করলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট সময়ে যথাসম্ভব উচ্চ হারে রাজস্ব আদায় করা, কোম্পানি এ বিষয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌছেছিল। অর্থাৎ এখন কোম্পানি তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিল। আবার আয়ের পরিমাণ জানার ফলে ব্যয়ের সংস্থান করাও কোম্পানির পক্ষে সম্ভবপর হয়েছিল।

 

৩. প্রশাসনিক জটিলতার অবসান: পূর্বে কোম্পানির রাজস্ব আদায় সম্পর্কে নির্ভর করতে হতো জমিদারদের উপর। ফলে জমিদারদের সাথে কারণে অকারণে বিবাদ লেগে থাকত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় জমিদারদের সাথে নির্দিষ্ট রাজস্ব, নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত হওয়ায় কোম্পানির প্রশাসনিক জটিলতার অবসান হয়।

 

৪. কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়ার ফলে কোম্পানির যেমন সুবিধা হয় তেমনি আবার অসুবিধাও হয়। কারণ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমির দাম বেড়ে যায়। কিন্তু জমির যে বাড়তি দাম তার সুবিধা ভোগ করে জমিদার শ্রেণি। কোম্পানির কোন আর্থিক লাভ হয় নি।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৮৬ সালে কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতবর্ষে এসে রাজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন তা আদৌ সফল হয় নি। কারণ সরকারের রাজস্বের যে নিশ্চয়তা হয় তার চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি।