চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলো আলোচনা কর।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলো আলোচনা কর।

ভূমিকা: লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯০ সালে দশসালা বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন। এ দশসালা বন্দোবস্তে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, কোম্পানি ডাইরেক্টর সভা অনুমোদন করলে এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ লাভ করবে। তাই ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ ডাইরেক্টর সভা অনুমোদন করলে এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল বা দোষাবলি: নিম্নে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল বা দোযাবলিসমূহ আলোচনা করা হলো:

 

১. প্রজা শোষণ বৃদ্ধি: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাস্তবায়িত হওয়ায় জমিতে জমিদারদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলার ভাগ্যহীন কৃষককুলের কোন উন্নতি হয় নি। বাংলার কৃষকরা নতুন জমিদারদের শোষণে নিষ্পেষিত হতে থাকে। কারণ কৃষকদেরকে পুরোপুরি নতুন জমিদারদের দয়ার উপর নির্ভর করে থাকতে হতো।

২. জরিপ ব্যবস্থার অভাব: এ ব্যবস্থায় নতুন জমিদারদের অধীনে জমি জরিপ না করে রাজস্ব নির্ধারণ করার অনেক সমস্যার উদ্ভব হয়। কারণ জমির উবর্রতা ও মান নির্ধারণ না করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয় নি।

৩. সূর্যাস্ত আইনে জমিদারি ধ্বংস: এ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার সূর্যাস্ত আইন অবলম্বন করায় অনেক পুরাতন জমিদার ধ্বংস হয় বা জমিদায়িত্ব হারান। ৪. ব্যবসায়

 

বাণিজ্যের ক্ষতিসাধন: এ ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় বাণিজ্যে মনোনিবেশ না করে মূলধন জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। এর ফলে ব্যবসায় বাণিজ্য ইংরেজদের একচেটিয়া করায়ত্তে যাওয়ায় সার্বিক বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। 4. ইংরেজ সরকারের ক্ষতি: এ ব্যবস্থার ফলে জমির মূল্যের তারতম্য দেখা দেয়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের রাজস্ব আয় নির্ধারিত ছিল। ফলে লাভবান হন জমিদার এবং ক্ষতি হয় সরকারের।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনামলে প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর একদিকে সাফল্যের কারণে যেমন এক শ্রেণির মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়। অন্যদিকে, আবার পুরাতন জমিদার শ্রেণি ধ্বংস হওয়ায় অনেক সমস্যা দেখা দেয়।