ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের প্রেক্ষাপট কী ছিল?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ: ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের প্রেক্ষিতে বাংলার রাজনীতি ও শাসন কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যাপক সুবিধা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিলির মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সম্মিলিত বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট পরাজিত হলে কোম্পানি বাংলা তথা ভারতের এক অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়। বস্তুত এ. যুদ্ধে পরাজয়ের ফলেই বাংলায় ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

লর্ড ক্লাইভ অত্যন্ত সুচতুর ও কূটকৌশলী ছিলেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে তার নীতির পরিবর্তন করেন। তিনি মনে করেন, সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ না করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া উচিত এবং দেশ দখলের দিকে মনোনিবেশ না করে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দেওয়ানি লাভের প্রাক্কালে এদেশের প্রশাসন দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা: নিজামত ও দেওয়ানি। আইনশৃঙ্খলা, বিচার বিভাগ, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি ছিল নিজামত শাসন অর্থাৎ নবাবের দায়িত্ব। আর রাজস্ব প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সম্পত্তি ও অন্যান্য অধিকার সংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রভৃতি কাজ ছিল দেওয়ানি শাসন অর্থাৎ দেওয়ানের দায়িত্বে। নবাব ও দেওয়ান উভয়েই সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। দেওয়ান তাৰু কাজের জন্য সরাসরি সম্রাটের কাছে জবাবদিহিতা করবেন। কিন্তু নবাবের কাছে নয়, ক্লাইভ যখন দেওয়ানি লাভ করেন তখন মীরজাফরের নাবালক পুত্র কোম্পানির হাতের ক্রীড়নক হিসেবে বাংলার মসনদে আসীন ছিলেন। এসময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। এ পরিস্থিতিতে রবার্ট ক্লাইভ চট্টগ্রাম থেকে দিলি পর্যন্ত সমগ্র এলাকার উপর সার্বভৌমত্ব দাবি না করে শুধু বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি প্রার্থনা করেন। সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এ প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করেন। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর অতি অল্পকালের মধ্যে ভারতবর্ষে বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়ে উঠে।