বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা : ইংরেজরা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার আত্মীয়স্বজন ও দরবারের লোকজনের সাথে ষড়যন্ত্র করে পলাশীর যুদ্ধে প্রহসনমূলকভাবে নবাবকে পরাজিত ও নিহত করে। এরপর নবাব মীর কাশিমের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব বাধে এবং এর চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ১৭৬৪ সালের ঐতিহাসিক বক্সারের যুদ্ধে।
বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি: পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর ইংরেজদের হাতের ক্রীড়নক হিসেবে বাংলার মসনদে উপবিষ্ট হন। ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান অর্থের চাহিদা মিটানোর মতো সামা পালন করতে মীরজাফর ব্যর্থ হয়।
রাজস্ব আদায় ঠিকমতো না হওয়াতে ইংরেজরা তাকে ওলন্দাজ ও আর্মেনীয়দের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করছে এ অজুহাত এনে তাকে পদচ্যুত করে এবং তার জামাতা কাসিমকে ক্ষমতায় মনোনীত করে। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক, স্বাধীনচেতা ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। শাসনক্ষমতা স্বীয় অনুকূলে আনার পাশাপাশি তিনি ঔদ্ধত্য ও বিদ্রোহী জমিদারদেরকে আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। ইংরেজদের আধিপত্য মনোভাব উপলব্ধি করে তিনি কৌশল হিসেবে কিছু নীতি গ্রহণ করেন। নীতিসমূহ নিম্নরূপ:
১. তিনি ইংরেজদের প্রাপ্য মিটানোর জন্য বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম এ তিনটি জেলা প্রদান করে ইংরেজদের নিকট হতে ঋণমুক্ত হন।
২. শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে যথাসম্ভব ব্যয়সংকোচ করেন এবং কয়েকটি নতুন কর স্থাপন করে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থাকে মজবুত করেন।
৩. জমিদারদের নিকট হতে বকেয়া রাজস্ব আদায় করে অর্থনৈতিক কাঠামো ঢেলে সাজান।
৪. ইংরেজ ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ রাজধানী মুর্শিদাবাদকে তিনি মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন।
৫. তিনি ইংরেজদের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির আড়ালে নিজ দেশীয় সৈন্যদের ইউরোপীয় কায়দায় প্রশিক্ষণ দিতে চাইলেন।
৬. এসব আয়োজন শেষ হওয়ার পূর্বেই ইংরেজদের সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং বক্সারের প্রান্তরে মুখোমুখি হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধ মূলত মীর কাসিম বাংলার স্বাধীনতার শেষ আশা আর ইংরেজ কোম্পানির রাজতন্ত্র দখলের চূড়ান্ত যুদ্ধ। মীর কাসিম যুদ্ধ করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। আর ইংরেজগণ ক্ষমতা দখল করে তাদের সাম্রাজ্যবাদ নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।