পলাশীর যুদ্ধের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। কারণ এ যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় ইংরেজ বেনিয়াদের আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দুঃশাসন।
পলাশীর যুদ্ধের কারণসমূহ: পলাশীর যুদ্ধ সংঘটনের পিছনে কতকগুলো কারণ পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. রাজনৈতিক কারণ: নবাব আলীবর্দী খান ইংরেজ ও ফরাসিদেরকে যদিও বাণিজ্য করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তথাপি তিনি তাদের এদেশে দুর্গ নির্মাণ ও যুদ্ধ করার জন্য নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু দেখা গেল নবাবের মৃত্যুর পর ইংরেজ ও ফরাসিগণ চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণ আরম্ভ করলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাদের এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ করেন। ফরাসিরা এ আদেশ মানলেও ইংরেজগণ এ আদেশ মানেন নি। এ পরিস্থিতিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাদের উপর ক্রুদ্ধ হন।
২. অর্থনৈতিক কারণ: ইংরেজরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যেসব বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা পেয়েছিল তারা এ সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার করতে থাকে। ফলে নবাব তাদের উপর বিদ্বেষীভাব পোষণ করতে থাকেন।
৩. অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র: নবাব আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় আমির উমরাগণ পরবর্তী নবাব নিয়োগের জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাদের ইচ্ছা ছিল বৃদ্ধ নবাবের মৃত্যু হলে মীরজাফর সিংহাসনে বসবে। তাদের এ মনোবাসনা পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রের রূপ ধারণ করেছিল।
৪. ঘসেটি বেগম ও শওকত জং এর ষড়যন্ত্র: আলীবর্দী খানের মৃত্যু হলে তাঁর মনোনয়নক্রমে সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাবি লাভ করেন। আলীবর্দী খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা তৎকালীন ঢাকায় বসবাসরত বিধবা ঘসেটি বেগম এবং পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জং ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা নবাবের পতন ঘটানোর জন্য অসন্তোষ সৃষ্টি করেন এবং ষড়যন্ত্র করতে থাকেন।
৫. ইংরেজগণ কর্তৃক রাজবলভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দান: ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিদ্রোহী কর্মচারী কৃষ্ণদাসকে প্রচুর ধনরত্নের বিনিময়ে আশ্রয় দিলে নবাব তাকে ইংরেজদের কাছ থেকে ফেরত চাইলে ইংরেজরা অস্বীকৃতি জানায় ফলে ইংরেজরা নবাবের বিরাগভাজন হলেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সামরিক দিক দিয়ে পলাশীর যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটা ছিল নিঃসন্দেহে বাংলার ইতিহাসের একটি সর্বাধিক বেদনাবহ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।