পলাশীর যুদ্ধ কী ১৭৫৭ সালে অবশ্যম্ভাবী ছিল ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০০ সালে মহারাণীর সনদ নিয়ে ভারতবর্ষে আসলেও ১৬৩১-৩২ সালে বাংলায় কোম্পানির ব্যবসায় বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। ১৬৫০ সালে ইংরেজরা নবাবের নিকট থেকে বাংলায় বাণিজ্য করার সনদ গায়। ১৬৬৮ সালে শাহ সুজা কোম্পানিকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনা শুল্কে বাংলায় বাণিজ্য করার অধিকার দেন।পলাশীর যুদ্ধের
অবশ্যম্ভাবিকতা: ১৭১৭ সালে ইংরেজগণ ফররুখ শিয়ারের নিকট থেকে বাংলায় অবাধ বাণিজ্য করার ফরমান লাভ করে। কিন্তু নবাব মুর্শিদকুলী খান দস্তকের ব্যাপারে আপত্তি তুললে কোম্পানির বাণিজ্য কিছুটা ব্যাহত হয়। নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে তারা স্বাধীনভাবেই ব্যবসায় বাণিজ্য করতে থাকে। তবে ইংরেজগণ যাতে বাংলার হয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতেন। নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহণ করলে তারা প্রথানুযায়ী উপঢৌকন না পাঠিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসময় ইউরোগে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকগণ বাংলায় দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। সিরাজউদ্দৌলা তাদেরকে নিরস্ত্র হতে আদেশ দেন। উদ্ধত ইংরেজ বণিকগণ সিরাজের আদেশকে উপেক্ষা করে চলে। তারা এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগম, রাজবলভ, শতওক জংও মীরজাফরের সাথে ষড়যন্ত্রে শরিক হয়ে নবাবকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইংরেজগণ। কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় আশ্রয় প্রদান করলে নবাব তাকে ফেরত চেয়ে দূত পাঠান। ইংরেজগণ কৃষ্ণদাসকে ফেরত দেয় নি। বরং নবাবের দূতকে অপমান করে। ফলে নবাব ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কাসিম বাজার কুঠি এবং কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করেন। নবাব মুর্শিদাবাদে ফিরে আসলে ইংরেজগণ পুনরায় কলকাতা দখল করে নেয় এবং হুগলীতে লুণ্ঠন চালায়। নবাব পুনরায় ইংরেজদের শায়েস্তা করার জন্য কলকাতার উপকণ্ঠে শিবির স্থাপন করলে ইংরেজগণ রাতের বেলায় অতর্কিত নবাবের শিবিরে আক্রমণ করে ১৩০০ লোককে হত্যা করে। এতে নবাব দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ইংরেজদের সাথে আলীনগরের সন্ধি নামে একিট কালো সন্ধি ‘সম্পাদন করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। এতে ইংরেজগণ নবাবের দুর্বলতা ভেবে তাকে পদচ্যুত করার জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হয়। নবাব এ ষড়যন্ত্রের কথা জেনে ইংরেজদের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়। ফলে পলাশীর যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যায়
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়।