পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক ব্যাখ্যা কর।

পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা: বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষেত্রে ঐতিহ্যময় যে অধ্যায় ছিল তার অবসান হয়। অন্যদিকে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় নবাবি শাসনের যে শেষ চিহ্নটুকু ছিল তা মুছে যায়।

 

পলাশীর ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনা: ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার ও বাংলার ইতিহাসের। গতি পরিবর্তনকারী যুদ্ধ হিসেবে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো:

 

১. প্রেক্ষাপট: এ দুটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল কারণ। ২. যুদ্ধের প্রকৃতি: পলাশীর যুদ্ধ, যুদ্ধ কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে, পলাশীর যুদ্ধ, যুদ্ধ নয়। কেবল ষড়যন্ত্রের মহড়া মাত্র। কারণ যুদ্ধ হলে সেখানে চূড়ান্ত পতির পরীক্ষা হতো। অন্যদিকে, বক্সারের যুদ্ধ ছিল। প্রকৃত যুদ্ধ। কারণ এ যুদ্ধে মীর কাসিম একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হন বা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। এমনকি ও দিলির সম্রাট শাহ আলমের সাহায্যে যে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলেন তাও ব্যর্থ হয়।অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা

 

৩. ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পলাশীর যুদ্ধ ছিল কেবলমাত্র সূচনালগ্ন অবস্থা। এ যুদ্ধে জয়লাভে কোম্পানি কেবল পায় সন্ধি মোতাবেক অর্থ ও কতিপয় সুবিধা। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা হয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে Decision maker । সকল ক্ষেত্রে কোম্পানির সিদ্ধান্তই হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

 

৪. সামরিক শক্তি: পলাশীর যুদ্ধে কোন পক্ষেরই সামরিক শক্তির তেমন প্রতিফলন ঘটে নি। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল ইংরেজ সামরিক শক্তির চূড়ান্ত উপস্থাপন।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পলাশীর যুদ্ধ ছিল পরিকল্পনাবিহীন উদ্ধৃত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সংঘটিত যুদ্ধ। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল পূর্ব পরিকল্পনা সম্পন্ন চূড়ান্ত শক্তির পরীক্ষা।