“পলাশীর যুদ্ধের পর আধুনিক যুগ শুরু হয়েছিল।” এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতামতগুলো আলোচনা কর।

“পলাশীর যুদ্ধের পর আধুনিক যুগ শুরু হয়েছিল।” এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতামতগুলো আলোচনা কর।

ভূমিকা: বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো পলাশীর যুদ্ধ। ১৭৫৭ সালে সংঘটিত এ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। বাঙালি জাতির এক গৌরবময় অধ্যায়ের বিসর্জন ঘটে শুরু হয়ে যায় ইংরেজ বেনিয়াদের দুঃশাসন আর আধিপত্যবাদের সময় এ যুদ্ধেরই মাধ্যমে।

আধুনিক যুগের সূচনা সম্পর্কিত মন্তব্য: পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে যে আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল সে সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। স্যার জে. এন, সরকার বলেছেন, “এক জাদুকর যেন তার জাদুদণ্ডের স্পর্শে প্রাচ্যদেশের স্থবির, চলশক্তিহীন, শুল্ক কঙ্কালগুলোকে নতুন প্রাণের বীজে সঞ্চারিত করে।” কিন্তু স্যার জে. এন. সরকারের এ উচ্ছ্বাসময় ব্যাখ্যা পুরোপুরি গ্রহণীয় নয়। প্রথমত এ যুগে বাংলার হিন্দু-মুসলিম নেতাদের মধ্যে নীতিবোধ ও মূল্যবোধের নিদারুণ অবক্ষয় দেখা যায়। ঐতিহাসিক পার্সিং ল স্পিয়ার যথার্থ ‘Benglee Dissensions‘ বা বাঙালির অন্তর্থদের কথা বলেছেন। বাঙালি নেতাদের এ চারিত্রিক অবক্ষয় ব্যক্তিগত লাভক্ষতির হিসেবে প্রকটিত হয়েছিল। এজন্যই তারা সিরাজকে গদিচ্যুত ও মীরজাফরকে সিংহাসন পেতে সাহায্য করে। এ যুগে কলকাতায় অবস্থিত ইংরেজ কর্মচারীদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ভীষণভাবে দেখা দেয়। বাঙালি জাতিকে প্রেরণা দেবার মতো শক্তি এসব ইংরেজদের ছিল না। ক্লাইভ নিজে নির্লজ্জ অর্থলোভ ও লুণ্ঠনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদের আলোকে ভারতে ইংরেজ শাসন স্থাপিত হবার বহু পরে উনবিংশ শতকে দেখা দেয়। পলাশীর অন্ধকার দূর হতে বহু দশক অতিক্রান্ত হয়। তবুও পি. জে. মার্শালের মন্তব্য, “পলাশী শুধুমাত্র একটি যুদ্ধ ছিল না; পলাশীর ঘটনা ছিল একটি বিপব।”

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে মধ্যযুগের অবসান এর পক্ষে যেমন অনেক যুক্তি দেখানো যায়, তেমনি এর বিপক্ষেও যুক্তি রয়েছে। কিন্তু এসব যুক্তিকে খণ্ডন করে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষের মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয়।