আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা, ১৯৪৯( Formation of Awami League, 1949)
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। আওয়ামী লীগ ছিল পাকিস্তানের প্রথম কার্যকর বিরোধী দল। ১৯৪৯ সালের শেষ নাগাদ পাকিস্তানে প্রায় বিশটি বিরোধী দল সক্রিয় ছিল।’ কিন্তু আওয়ামী লীগের ন্যায় অন্য কোন দলের জনপ্রিয়তা ও কার্যকারিতা ছিল না। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা, বাঙালির অধিকার আদায় এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানে এই দলটি পালন করে অনন্য ভূমিকা। আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এটি পাকিস্তান মুসলিম লীগ নাম ধারণ করে। স্বাভাবিকভাবে এ দলের হাতেই তখন পাকিস্তানের শাসনভার অর্পিত হয় কিন্তু মুসলিম লীগের নেতৃত্ব ছিল অবাঙালিদের হাতে। যদিও তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ (প্রায় ৫৬ ভাগ) ছিল বাঙালি। উপরন্তু দলটি ছিল মধ্যযুগীয় ভাবধারায় পরিচালিত সামন্তদের দ্বারা পরিচালিত একটি দল। মুসলিম লীগের সামন্ততান্ত্রিক রক্ষণশীল নেতৃত্ব সংকীর্ণ আঞ্চলিক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব দ্বারা পরিচালিত হয়ে দেশ পরিচালনা করে। দেশ বিভাগের অব্যাবহিত পরেই মুসলিম লীগের ঔপনিবেশিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণ দলের অভ্যন্তরে প্রগতিশীল অংশকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। মূলত এই অংশের হাতেই গণমানুষের দল হিসেবে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পরপরই অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, জাতীয়তাবাদী ভাবধারা, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক হিসেবে দলটি ব্যাপক গণমানুষের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়। বিশেষকরে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে দলটির জনপ্রিয়তা ছিল সর্বোচ্চ।