ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?
ভূমিকা: প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ, নির্যাতন, কুশাসন, লুণ্ঠন প্রভৃতির ফলে ভারতবর্ষের সাধারণ জনগণের জীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল। বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়েছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধোত্তর বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল নিম্নরূপ:
১. বাংলার বিপর্যন্ত কুটিরশিল্প: বাংলার কুটিরশিল্পগুলো ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বাংলার বস্ত্রশিল্পগুলোতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা যায়। কারণ ইংল্যান্ডে বাংলা থেকে আমদানিকৃত সুতি বস্ত্রের উপর অত্যধিক হারে শুল্ক আদায়ের ফুলে বাংলা থেকে কাপড় রপ্তানি হ্রাস পায়।
২. বাংলার বিপর্যন্ত বস্ত্রশিল্প: ইংল্যান্ডে শিল্পবিপবের ফলে কলকারখানায় তৈরি উদ্বৃত্ত বস্ত্র বাংলা তথা ভারতের বাজারে আমদানি করা হয়। এর ফলে বাংলার বস্ত্রশিল্পগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
৩. দেশীয় বণিকদের বিপর্যয়: ১৭৫৭-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোম্পানির কর্মচারী ও স্বাধীন ইংরেজ বণিকরা ব্যাপক বিনাশুল্কে আন্তঃবাণিজ্য চালায়। এ দুর্নীতিপূর্ণ বাণিজ্যের ফলে দেশীয় বণিকদের ব্যবসা ধ্বংস হয়।
৪. ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সূচনা: পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলায় প্রচণ্ড ভূমি রাজস্বের চাপ বেড়ে যায়। ভূমি রাজস্বের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড শোষণ আরম্ভ হয়। কৃষকদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে।
৫. ইউরোপীয় বণিকদের আধিপত্য: বাংলার বাণিজ্যে ইউরোপীয় বণিকদের একচেটিয়া অধিকারে চলে যায়। ইউরোপীয় বণিকরা তাদের গোমস্তা, বেনিয়ান, মুৎসুদ্দি প্রভৃতির সাহায্যে বাংলায় একচেটিয়া বাণিজ্য চালাতে থাকে।ইসলামের ইতিহাস (১৬৭৪)-২
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় বাংলার জাতীয় জীবনের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের গোড়া পত্তন ঘটে এবং বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা চরম অধঃপতনে চলে যায়।