বাংলায় ফরাসি বণিকদের আগমন সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তরঃ
ভূমিকা : বঙ্গদেশ সুদূর অতীতকাল হতে শস্যের দেশ ও প্রাচুর্যের দেশ হিসেবে সুপরিচিত। এদেশের প্রাচুর্য এবং দ্রব্যের স্বল্পমূল্য বিদেশি বণিকদেরকে এদেশের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। এদেশের বণিকরা বিভিন্ন পণ্য বোঝাই করে বিদেশের বন্দরগুলোতে পাড়ি জমাত। বিদেশের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনই বঙ্গের সমৃদ্ধির বিশেষ কারণ ছিল।
বাংলায় ফরাসি বণিকদের আগমন: ফরাসিরা ‘ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া’ কোম্পানি নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে ভারতবর্ষে আগমন করেছিল। প্রথম দিকে দাক্ষিণাত্যেই তারা তাদের বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ১৬৭৪ সালে তারা বাংলার দিকে দৃষ্টি দেয়। এসময় বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবল প্রতাপ ছিল। বাংলায় বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ফরাসিরা শায়েস্তা খানের নিকট হতে গঙ্গা নদীর তীরে চন্দননগর নামক স্থানটি ক্রয় করে। ওলন্দাজরা প্রথম দিকে তাদেরকে প্রবল বাধা দিলে তারা এ স্থানটি সুরক্ষিত করতে সমর্থ হয়েছিল। ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি এজেন্ট জেস ল্যান্ডাগণ সাড়ে তিন শতাংশ শুল্ক প্রদানের শর্তে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় বাণিজ্য করার অধিকার আদায় করেন। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিরা চন্দননগরে তাদের দুর্গ স্থাপন করেছিল। পরবর্তীকালে কাসিমবাজার ও বালেশ্বরেও তাদের দুটি কুঠি গড়ে উঠেছিল। ভারতবর্ষে ইংরেজরা যখন নিজেদের শক্তিকে সুদৃঢ় করেছিল ঠিক তখনই ফরাসিদের আবির্ভাব ঘটে। তারাও ইংরেজদের মতো ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখত। ফলে দাক্ষিণাত্যে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়। ফরাসিরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারে নি। বাংলাতে ইংরেজরা কলকাতা দখলের পর চন্দননগর দখল করে। এভাবে দাক্ষিণাত্যের মতো বাংলাতেও তাদের কর্তৃত্ব বিস্ত ারের স্বপ্ন বিলুপ্ত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ধনসম্পদ ও প্রাচুর্যে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপীয় বণিকগণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলায় পদাপর্ণ করেছেন। পর্তুগিজদের পথ অনুসরণ করে বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকদের মতো ফরাসিরাও বাংলায় আগমন ঘটে।