বাংলায় ওলন্দাজদের আগমনের ইতিহাস বর্ণনা কর।
ভূমিকা: ইউরোপে ব্যবসায় বাণিজ্যের বিপ্লব ঘটলে ইংরেজরা তাদের পণ্যসামগ্রীর বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। মূলত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই তারা ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করলেও দেখা গেছে যে, তারা পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম আগমন করেন পর্তুগিজরা এবং পরবর্তীতে ওলন্দাজরা। নিম্নে তাদের আগমনের ইতিহাস তুলে ধরা হলো:
ওলন্দাজদের আগমন: পর্তুগিজদের পরে আরো কয়েকটি ইউরোপীয় বণিক দল ভারতবর্ষে আসে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ওলন্দাজগণ ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। ভারতীয় জলপথে প্রভুত্ব স্থাপনকে কেন্দ্র করে ওলন্দাজদের সাথে পর্তুগিজদের সংঘর্ষ বাধে। এতে পর্তুগিজরা মোটেই সুবিধা করতে পারে নি। ১৮০২ সালে ওলন্দাজদের বাণিজ্য সংস্থা রাষ্ট্রের অনুমোদন পায়। মালাক্কার কাছে তারা যুদ্ধে পর্তুগিজদের পরাজিত করে।
পরবর্তীকালে ওলন্দাজগণ সিংহল দ্বীপে রাজা সিংহের সহায়তায় পর্তুগিজদের হটিয়ে তাদের ভিত্তি আরো সুদৃঢ় করে। সিংহল দ্বীপ তখন ওলন্দাজদের দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাইন ও অপর প্রান্তে বদ্বীপের উপনিবেশকে পাহারা দেবার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ওলন্দাজগণ এভাবে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য গাঁটি স্থাপন করেছিল। দিলির সম্রাট ফররুখ শিয়ার ওলন্দাজদের শতকরা সাড়ে তিন টাকার পরিবর্তে শতকরা আড়াই টাকা শুল্কের বিনিময়ে বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন। ভারতের পশ্চিম উপকূলে সুরাট, কালিকট, কোচিন, সিংহলে, কান্দি, কলম্ব, ত্রিক্কোমালি, পূর্ব উপকূলে মসুলিপট্টম, কালিকট, বাংলায় চুঁচুড়া, কাসিম বাজার, বিহারে পাটনা, উড়িষ্যায় বালেশ্বর প্রভৃতি স্থানে ওলন্দাজদের ঘাঁটি ও কারখানা স্থাপিত হয়।
: পরিশেষে বলা যায় যে, ওলন্দাজরা ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দিনেমার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করে। তারা ভারতের তানজোর জেলায় ও কলকাতায় তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। অবশেষে বাণিজ্যে সুবিধা করতে না পেরে তারা তাদের বাণিজ্য কুঠি দুটি ইংরেজদের নিকট স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে।