বাংলায় ইংরেজ বণিকদের আগমনের ইতিহাস তুলে ধর।
উত্তরঃ
ভূমিকা: পর্তুগিজদের বাণিজ্যিক সফলতায় উৎসাহী হয়ে ইংরেজ বণিকগণ ভারতবর্ষে আসে। ইউরোপীয়দের মধ্যে তারা একমাত্র জাতি যারা ভারতবর্ষে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আগমন করে ভারতবর্ষে নিজেদের উপনিবেশ গঠন করেছিল। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের শুধু পরাজিতই করে নি বরং উপমহাদেশের শাসকেও পরিণত হয়েছিল।
১. ইংরেজদের প্রথম পদক্ষেপ: প্রাচ্যদেশের সাথে বাণিজ্য করার জন্য ইংরেজরা একটি বাণিজ্য সংঘঠন করে। জন মিলড্রেন হলো ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথের নিকট থেকে একটি অনুরোধ পত্র নিয়ে আকবরের দরবারে আসেন। এতে ইংরেজ বণিকদের জন্য পর্তুগিজদের অনুরূপ বাণিজ্যি সুবিধা চাওয়া হয়।
২. ক্যাপ্টেন হকিলের অবদান: ক্যাপ্টেন হকিন্স ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের সুপারিশপত্র নিয়ে বাণিজ্য কুটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে আগমন করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ক্যাপ্টেন হকিন্সের আবেদনক্রমে সুরাটে ইংরেজদের বাণিজ্য কুটি নির্মাণের অনুমতি দেন।
৩. ফররুখ শিয়ারের ফরমান: ১৭১৭ সালে ফররুখ শিয়ার কর্তৃক ফরমান প্রাপ্তির মাধ্যমে ইংরেজরা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা পায়। তারা বাৎসরিক কিছু অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বিনা শুল্কে মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বত্র বাণিজ্য করার অনুমতি পায়। এতে ইংরেজদের ভিত্তি ভারতবর্ষে আরো সুদৃঢ় এবং রাজনৈতিকভাবে তারা কর্তৃত্ব খাটানোর প্রয়াস পায়।
৪. রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: এভাবে বিভিন্ন প্রকার ঘটনার মাধ্যমে ইংরেজরা এদেশে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাতে থাকে। তারা ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে এবং ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে মীরকাসিমকে পরাজিত করে বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, গোটা মুঘল সাম্রাজ্যে ইংরেজ শক্তি বৃদ্ধি পেলে সর্বশেষ মুঘল সম্রাটকে পরাজিত করে তারা সমগ্র ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের শিকল পরিয়ে দেয়। এভাবেই বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ইংরেজরা এসে গোটা ভারতবর্ষকে শাসন করতে সক্ষম হয়েছিল।