কোম্পানির শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?
ভূমিকা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দীর্ঘ দুইশত বছরের শাসন বাংলার রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশ শাসনামলে আদি হতে অন্ত পর্যন্ত বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল এক দ্বন্দ্ব সংঘাতময়। এ দ্বন্দ্ব সংঘাতময় রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে।
কোম্পানির শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা: নিম্নে কোম্পানির শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা ব্যাখ্যা করা হলো:
১. ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় দালাল সৃষ্টি: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দু-মুসলিম অনেক বনেদি জমিদার তাদের জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক শ্রেণির নতুন দালাল জমিদার সৃষ্টি হয়।
২. কৃষক আন্দোলনের সূত্রপাত: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে যে দালাল নতুন জমিদার শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রজার অত্যাচার করা এবং ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে সুযোগ সুবিধা অর্জন করা। এ কারণেই সমগ্র ভারতবর্ষে ছোট বড় কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়।
৩. রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট: ব্রিটিশ বেনিয়াদের দুইশত বছরের শাসনব্যবস্থা বাংলার জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। তাদের শাসনব্যবস্থার প্রারম্ভেই বাংলা ও ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়।
৪. সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সূচনা: ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসনের অত্যাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বাংলা তথা ভারতীয় জনগণের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক গণসচেনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯০৬ সালে “সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ” নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠলেও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এসব আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারে নি। এ কারণে ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।