ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর।
ভূমিকা: ইংরেজরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে বাংলায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করার জন্যে বিভিন্ন কূটকৌশল গ্রহণ করে এবং ক্রমান্বয়ে নিজেদের শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি করে এক পর্যায়ে ইংরেজ কোম্পানি বাংলা তথা
সমগ্র ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল।
১. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন: ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ইতোপূর্বে ব্যক্তিগতভাবে আগত সকল বণিকদের একত্রিত করে ‘British East India Company’ গঠন করেন। এ কোম্পানি ভারতে আগমন করে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট থেকে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণের অনুমতি লাভ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করে।
২. বঙ্গদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি: ১৬৫১ সালে বঙ্গদেশের সুবেদার শাহ সুজা বাৎসরিক ৩,০০০ টাকা শুল্ক প্রদানের বিনিময়ে ইংরেজদের এদেশে অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ প্রদান করেন। ১৬৭২ সালে আওরঙ্গজেব কর্তৃক নিযুক্ত বাংলার গভর্নর শায়েস্তা খান ইংরেজদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করেন।
৩. রাজমহল ও মালদহে কুঠি স্থাপন: ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা এবং তার কিছুদিন পর রাজমহল এবং মালদহে ইংরেজরা বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এসব কুঠি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমান্বয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে তৎপর হয়।
৪. কলকাতা নগরী প্রতিষ্ঠা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি জন চাইল্ড ভাগীরথী নদীর তীরে কালিকট, সুতানটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম ১৬৯০ সালে ক্রয় করেন এবং এখানে ক্রমান্বয়ে কলকাতা নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. পলাশীর যুদ্ধ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার উপর একচ্ছত্র ব্যবসায় বাণিজ্যের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এদেশের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে চক্রান্তমূলকভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়ে উঠে।
৬. বাংলায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: ১৭৬০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলায় জমিদারি লাভ করে এবং এভাবে বাংলার সম্পদ সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা লাভ করার পর ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে পরবর্তীতে বক্সারের যুদ্ধে মীরকাসিমকে পরাজিত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশের সার্বভৌম ক্ষমতার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব লাভ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বাণিজ্যের সুযোগ লাভ করে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন করার চক্রান্ত করে এবং সুচতুর ইংরেজরা কূটকৌশলে এবং পরবর্তীতে রণকৌশলে বিহার ও উড়িষ্যার উপর তাদের বাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।